সন্তানদেরকে জান্নাতি গুণে গুণান্বিত করার জন্য কী করবেন

প্রশ্ন                                                                                                         

বর্তমানে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করতে চান কিন্তু তাদেরকে জান্নাতি বানাতে হলে আমাদেরকে কোন গাইড লাইন অবলম্বন করতে হবে? এ জন্য কি আপনার কোন গাইডলাইন দিতে পারবেন?

উত্তর                                                                                                       

بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما

জান্নাতি পরিবার গঠনের জন্য কোন বিষয়গুলো আমাদেরকে বর্জন করতে হবে আর কোন বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে আমরা তা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করছি। দেখুন, আমরা শুধু নিজেরা জান্নাতে যেতে চাই না। বরং আমাদের পরিবারসহ আমরা জান্নাতে যেতে চাই। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا

‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।’ [সূরা তাহরিম, আয়াত: ৬]

তাই নিম্নোক্ত কাজগুলো আমাদেরকে বর্জন করতে হবে,

১. আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদতে অলসতা করা যাবে না। পরিবারের সকল সদস্যকে যথাযথভাবে এগুলো পালন করতে হবে।

২. শিরক, বিদআত বা অশ্লীলতাপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা বা তাতে যোগদান করা যাবে না।

৩. অপরের দোষ-ত্রুটি খোঁজার মন মানসিকতা সন্তানদের মাঝে সৃষ্টি করা যাবে না।

৪. পরিবারের সকল সদস্য একসাথে বসে অশ্লীলতাপূর্ণ কোনো মুভি, সিরিয়াল, এক কথায় কোনো শরিয়ত বিরোধী অনুষ্ঠান দেখা যাবে না। বরং কুরআন তেলাওয়াত ও ইসলামি স্কলারদের আলোচনা শুনতে হবে।

৫. অপরের অনুপস্থিতিতে দোষচর্চা করার মানসিকতা সন্তানদের মাঝে সৃষ্টি করা যাবে না।

৬. কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

৭. আমানতের খেয়ানত করা শিখানো যাবে না। বর্তমানে পিতা-মাতাই সন্তানদের সামনে আমানতের খেয়ানত করে থাকে। ফলে সন্তানরা তা দেখে শিখে থাকে।

৮. কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও মানুষের মাঝে অসমতা বিধানের মানসিকতা সন্তানদেরকে শিখানো যাবে না। বিশেষ করে বর্তমান সমাজে কাজের লোকদের প্রতি অসামাজিক আচরণ করা হয়ে থাকে। এ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

৯. সন্তানদেরকে গালাগালি শিখানো যাবে না। যারা গালাগালি করে তাদের সাথে মিশতেও দেওয়া যাবে না। অথচ বর্তমানে দেখা যায় বাবা, মা-ই সন্তানদের সামনে গালাগালি করে। ফলে সন্তানরাও তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে।

১০. কাউকে কথার মাধ্যমে লজ্জা দেওয়া শিখানো যাবে না।

১১. মিথ্যা কথা বলা শিখানো যাবে না।

১২. ধোঁকা দেওয়া শিখানো যাবে না।

১৩. কারো ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করা শিখানো যাবে না।

১৪. ওয়াদার খেলাফ শিখানো যাবে না।

১৫. মোবাইল বা টেলিভিশনে অশ্লীল কোনো ভিডিও বা অনুষ্ঠান দেখতে দেওয়া যাবে না।

আমরা যদি এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে পারি তাহলে আশা করা যায় আমাদের সন্তানদের নৈতিক চরিত্র ভালো হবে।

আর যে কাজগুলো আমাদেরকে করতে হবে তা হল,

১. নিষ্ঠাপূর্ণ ও বিশুদ্ধ নিয়তের অধিকারী হতে হবে।

২. আমাদের সকল কাজ হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য- পরিবারের সকলকে এ শিক্ষা দিতে হবে।

৩. আমরা যত কাজ করব তা রাসূলের তরীকা মোতাবেক হতে হবে। পরিবারের মাঝে যত কাজ করব তা সুন্নাহ মোতাবেক হতে হবে।

৪. সত্যবাদী হতে হবে। আমরা সত্যবাদী না হলে সন্তানরাও সত্যবাদীতা শিখবে না।

৫. উদার মানসিকতার হতে হবে। তাহলে সন্তানরাও উদার মনের হবে।

৬. ক্ষমা করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে আমার সন্তানরাও মানুষকে ক্ষমা করতে শিখবে। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের গুণাবলী উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন,

وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

‘ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪]

৮. যে কোনো কাজে অপরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে সম্মান দিতে হবে।

সংক্ষেপে এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হর। এই কাজগুলো যদি আমরা করতে পারি তাহলে আমাদের পরিবার জান্নাতি পরিবারে রূপান্তরিত হবে।

আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

و الله تعالى أعلم بالصواب

وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم

উত্তর দিচ্ছেন: ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী সূত্রhttps://www.drkhalilurrahman.com/8535/article-details.html