গায়েবানা জানাযা পড়ার বিধান কী?
প্রশ্ন
আমাদের সমাজে একটি বিষয় প্রচলিত আছে। তা হলো, কোনো বড় ব্যক্তি মারা গেলে তার গায়েবানা জানাযা পড়া হয়ে থাকে। এলাকার কয়েকজন আলেমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এ পদ্ধতিকে সঠিক বলেন। এক্ষেত্রে তারা রাসূল (সা.) কর্তৃক বাদশাহ নাজাশীর গায়েবানা জানাযা পড়ার দলিল পেশ করে থাকে। এখন জানার বিষয় হল, গায়েবানা জানাযা নামায বৈধ কি? আর নাজাশীর ঘটনা দ্বারা গায়েবানা জানাযা প্রমাণিত হয় কি? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
জানাযা নামায আদায়ের জন্য মৃতের লাশ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাযা নামায সহিহ নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর অসংখ্য সাহাবী মদীনার বাইরে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়ার প্রমান নেই। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের জানাযার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, তোমাদের যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে জানাবে। কারণ আমার জানাযা নামায তার জন্য রহমত।(সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩০৮৩)
আর শুধু নাজাশীর জানাযা পড়াটা ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাযা জায়েয হওয়াকে প্রমাণ করে না। এছাড়া মুসনাদে আহমদ ও সহিহ ইবনে হিব্বানে নাজাশীর জানাযা সম্পর্কিত একটি হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, নাজাশীর লাশ কুদরতিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনেই উপস্থিত ছিল।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় করো। ইমরান (রা.) বলেন, অতপর রাসূলে কারীম (সা.) দাঁড়ালেন। আর আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২০০০৫; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩০৯৮)
এছাড়া অনেক মুহাদ্দিসগণ নাজাশীর জানাযা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হল, নাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানাযা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল (সা.) সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাযা পড়িয়েছেন।
আল্লামা যায়লায়ী (রাহ.), আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ও আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রাহ.) এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (দেখুন : নাসবুর রায়া ২/২৮৩; যাদুল মাআদ ১/৫০২; ফয়যুল বারী ২/৪৭০)
উলামায়ে কেরাম এ ঘটনার আরো অন্যান্য ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন।
যা হোক, এটা ছিল নববী জীবনের স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। এর উপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে প্রচলিত গায়েবানা জানাযাকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। কেননা অনুসৃত সুন্নাহর সাথে এটির কোনো মিল নেই।
এছাড়া যে লাশের কোথাও জানাযার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাযা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাযা পড়ার একটি ঘটনাও হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তাই এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
-সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪০৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; ফাতহুল কাদীর ২/৮০, ৮১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; মাজমাউল আনহুর ১/২৭২; রদ্দুল মুহতার ২/২০৯; ইলাউস সুনান ৮/২৮৩
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন: ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী