আলওয়ালা ওয়াল বারা এর অর্থ কী?
প্রশ্ন
একবার মাহফিলে একজন আলেমের বয়ানে শুনেছিলাম, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি আকিদা হল, আলওয়ালা ওয়াল বারা। তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতা হবে শুধু মুসলমানদের সাথে। কাফেরদের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা জায়েয নেই। আমার প্রশ্ন হল, কাফেরদের সাথে কি সব ধরনের সম্পর্ক রাখা নিষেধ? স্কুল-কলেজে আমাদের অনেক বিধর্মী বন্ধু-বান্ধব থাকে। তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, খেলাধূলা করা কি শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম? নাকি সম্পর্কের বিশেষ কোনো প্রকারকে হারাম বলা হবে? উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলনীতি হল, মুমিনের ঘনিষ্ঠতা হবে মুমিনের সাথে। কোনো মুমিনের জন্য অমুসলিমের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়া নিষিদ্ধ। প্রশ্নের আলওয়ালা ও আলবারা দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য। আলওয়ালা অর্থ অন্তরঙ্গতা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব আর আলবারা অর্থ সম্পর্কচ্ছেদ।
পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে,
وَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ
আর মুমিন পুরুষরা ও মুমিন নারীরা হচ্ছে একে অন্যের বন্ধু। (সূরা তাওবা, আয়াত : ৭১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَ .
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিনদেরকে ছেড়ে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (সূরা নিসা,আয়াক: ১৪৪)
এমনকি ঐ কাফের বা অমুসলিম যদি তার বাবা-পুত্র, বা নিকটাত্মীয়ও হয় তারপরও তার সাথে অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক রাখা বৈধ হবে না।
কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْۤا اٰبَآءَكُمْ وَ اِخْوَانَكُمْ اَوْلِیَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَی الْاِیْمَانِ وَ مَنْ یَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ.
হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমানের মোকাবেলায় কুফরকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবে বস্তুত তারাই বড় নাফরমান। (সূরা তাওবা, আয়াত : ২৩)
সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য অমুসলিম, কাফের-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব গড়া বা হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক রাখা বৈধ নয়। তবে সহপাঠী হিসেবে বা প্রতিবেশী কিংবা কাজের সাথী হিসেবে সাধারণ ও সৌজন্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখা জায়েয আছে। তদ্রূপ তাদের সাথে বৈধ খেলাধূলা করাও জায়েয আছে।
তাই কাফেরদের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা জায়েয নয়- এত ব্যাপকভাবে বলা ঠিক নয়। তবে তাদের সাথে সাধারণ ও সৌজন্য সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি-
১. সব সময় নিজের ঈমান ও ইসলামের স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা রক্ষার প্রতি পূর্ণ যত্নবান থাকতে হবে।
২. তাদের কোনো ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
৩. জীবনাচারের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব বেশভূষা ও কৃষ্টিকালচারের অনুসরণ করা যাবে না।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم