মৃত ব্যক্তির গোসলকে ঘিরে কিছু কুসংস্কার।

প্রশ্ন                                                                                         

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে মৃত ব্যাক্তিকে (মহিলা) গোসল করানোর ব্যাপারে বিভিন্ন ধরণের কুসংস্কার চালু রয়েছে, যা কোনো মাসআলার কিতাবে পাওয়া যায় না। যেমন- ১. যে ব্যক্তি নাপাক পরিষ্কার করে তাকে আর সেখানে থাকতে দেওয়া হয় না । তাদের ভাষ্যমতে সে নাকি নাপাক হয়ে গেছে। সে গোসল করার আগে আার কোনো কিছু স্পর্শ করতে পারবে না। ২. গোসল শেষে চোখে সুরমা দেওয়া হয়, নাকে কানে তুলা গুঁজে দেওয়া হয়। ৩. সাবান দিয়ে সারা শরীর তিন বার ধৌত করা হয়।  ৪.  বিভিন্ন রকমের জারি গান গাওয়া হয়।  ৫.  গোসল শেষ করে সবাই মাইয়্যিতের জন্য হাত তুলে ‍দোয়া করে। আমার জানার বিষয় হলো, এই সমস্ত কাজ করা কি সঠিক?

উত্তর                                                                                       

بسم الله الرحمن الرحيم

حامدا و مصليا و مسلما

১. যিনি  মৃত ব্যক্তির নাপাক  পরিষ্কার করবেন তার নাপাক হয়ে যাওয়ার ধারণাটি ভুল। সুতরাং এ কারণে তাকে সেখানে আর থাকতেই না দেওয়া এবং তাকে নাপাক মনে করা সবই ভুল ও কুরসমের অন্তর্ভুক্ত। এসব ধারণা ও কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। প্রকাশ থাকে যে, মৃত ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি গোসল দেবে সে-ই তাকে ইস্তেঞ্জা করাতে পারবে। এর জন্য ভিন্ন লোকের প্রয়োজন নেই। -কিতাবুল আছল ১/৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮২; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭০; ফাতহুল কাদীর ১/৫৮   ২. মৃত ব্যক্তির চোখে সুরমা দেওয়া নিষেধ। হাদিস শরিফে মৃতকে সিঁথি বা সৌন্দর্যবর্ধনমূলক কোনো কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর নাকে কানে তুলা দেওয়ার বিষয়টিও শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কোনো কোনো ফকীহ তা ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই বলেছেন। তাই কেউ দিলে বাড়াবাড়ি করার প্রয়োজন নেই। -কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ৩৮১, ৩৮২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩, ২/১৭৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮   ৩.  মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় একবার সাবান দেয়াই যথেষ্ট। তিনবার নিয়ম করে সাবান দেবে না। সুন্নত মনে না করে পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে দিলে সমস্যা নেই। তবে পুরো শরীরে তিন বা ততোধিক বার পানি ঢালার কথা হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। হযরত উম্মে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

تُوُفِّيَتْ بِنْتُ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ لَنَا: اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا، أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، إِنْ رَأَيْتُنّ.

অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর মেয়ে যায়নাব (রা.)-এর ইন্তেকাল হলে তিনি আমাদের বললেন, তোমরা তার পুরো শরীরে তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনে আরো বেশিবার পানি ঢালো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৫৭)   ৪.  মৃত ব্যক্তির শোকে গীত গাওয়া ও সম্মিলিতভাবে কান্নাকাটি করা নিষিদ্ধ। এগুলো হাদিস শরিফে নিষিদ্ধ নিয়াহার অন্তর্ভুক্ত। হযরত উম্মে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَهَانَا عَنِ النِّيَاحَةِ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে নিয়াহা থেকে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩১২৭)   মোল্লা আলী আলকারী (রাহ.) ‘নিয়াহা’র ব্যাখ্যায় বলেন, নিয়াহা হল মৃত ব্যক্তির জন্য নারীদের একত্রিত হয়ে সমস্বরে ক্রন্দন করা, মৃতের শোকে শ্লোক-কবিতা আবৃত্তি করা, মৃতের প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করতঃ বিলাপ করা ইত্যাদি। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৮৮)   ৫.  গোসল শেষে হাত তুলে মুনাজাত করা বিদআত। মৃতের জন্য সম্মিলিতভাবে দুআ করার শরীয়তসম্মত পন্থাই হল জানাযার নামায। তাই গোসলের পর মুনাজাতের এই প্রথাটি পরিহার করতে হবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫

আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

و الله تعالى أعلم بالصواب

وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم

উত্তর দিচ্ছেন: ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=26794&preview=true