প্রশ্ন
বর্তমানে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। সামান্য সামান্য কারণেও দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাচ্ছি।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হল, ইসলামে তালাক দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে ঠিকই, তবে প্রয়োজন ব্যতিরেকে কারও দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাক, ইসলাম তা কখনো চায় না। ইসলাম চায়, এ পবিত্র বন্ধন যেন সারাটি জীবন অটুট থাকে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যেন এক অপর থেকে প্রশান্তি অর্জন করে করে সারাটি জীবন অতিবাহিত করে। তাই তালাকের প্রতি অনুৎসাহিত করে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে-
أَبْغَضُ الْحَلالِ إلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الطَّلاقُ
‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত বৈধ বিষয় হল তালাক দেওয়া।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২১৭৮]
আরেক হাদীসে বলা হয়েছে-
أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا الطَّلاَقَ مِنْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ لَمْ تَرِحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ
যে নারী (শরীয়তসম্মত) ওজর ছাড়া স্বামীর নিকট তালাকের আবেদন করে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৯৬০৩]
আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
الطَّلاَقُ قَبِيحٌ ، أَكْرَهُهُ
তালাক মন্দ কাজ। আমি তা অপছন্দ করি। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৯৬০১]
কিন্তু বাস্তবতা হল, অধিকাংশ স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই কম-বেশি মনোমালিন্য হয়। কখনো কখনো কারও মনমালিন্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে তাদের সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আর একসাথে বসবাস করতে পারে না। তখন বিচ্ছেদ ছাড়া তাদের সামনে আর কোন পথ খোলা থাকে না। এ অবস্থায় যদি তাদের একসাথে সারাটি জীবন অতিবাহিত করতে হয় তাহলে যেমনিভাবে তারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনিভাবে তাদের সন্তান-সন্ততিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ইসলাম তাদেরকে এ সম্পর্ক ছিন্ন করার সুযোগ দিয়েছে, যেন তারা এই ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে পারে এবং নিজের জীবনকে নতুন করে সাজিয়ে নিতে পারে।
বিশিষ্ট ফকীহ আবু বকর মারগীনানী (রহ.) বলেন: তালাক দেওয়া মূলত নিষিদ্ধ। কারণ এর দ্বারা বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। অথচ বিবাহের সাথে দুনিয়া ও আখিরাতের বহু কল্যাণ সম্পৃক্ত। হ্যাঁ, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের জন্য একে বৈধ করা হয়েছে।
আলহিদায়াহ ১/৪০৮
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8994/article-details.html