প্রশ্ন
আলেমদের মধ্যে এই যে এত মতপার্থক্য এটা তো অস্বাভাবিক বিষয় মনে হয়। তাদের মাঝে এত বেশি মতপার্থক্য কেন? এক ইসলামে এত মতপার্থক্য কেন?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মানুষের মতের ভিন্নতা স্বাভাবিক একটি বিষয়। একারণে কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ
‘এবং যদি তোমার রবের ইচ্ছা হত তাহলে তিনি সকল মানুষকে একই মতাবলম্বী করে দিতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে।’ [সূরা হুদ, আয়াত: ১১৮]
তবে এই মতভিন্নতা যেন শত্রুতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য ইসলাম নির্দিষ্ট সীমারেখা দিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. ইউসুফ আল কারযাবী একটি সুন্দর কথা বলেছেন যে, ‘ইসলামের যে মতানৈক্য রয়েছে বিশেষ করে মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে তা মূলত বৈচিত্রময় মতানৈক্য। বৈপরিত্বময় মতানৈক্য নয়।’
মতানৈক্য ছিল। মতানৈক্য থাকবে। এটাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। আমরা যদি এ বিষয়টি মেনে নিতে পারি তাহলে কিন্তু অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সমস্যা তখনই শুরু হয় যখন কেউ মনে করে, কোনো মতানৈক্য থাকতে পারবে না। আমার মতটাই সকলের গ্রহণ করতে হবে। যদি বিষয়টি এমনই হত তাহলে রাসূল (সা.) এ কথা বলতেন না যে,
إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
‘কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজতিহাদে ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৫০]
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাব, সাহাবায়ে কেরামের মাঝে ইখতেলাফ থাকলেও তারা পরস্পরকে কিভাবে শ্রদ্ধা করতেন। এই ইখতেলাফ তাদের মাঝে কোনো বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে পারেনি। একটি হাদিসে এসেছে, একবার উসমান (রা.)-এর খেলাফতকালে তিনি ও ইবনে মাসউদ (রা.) হজ্বে গেলেন। মিনায় উসমান (রা.) চার রাকাত নামাজ পড়লেন। হাদিসের ভাষ্য হল,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: صَلَّى عُثْمَانُ بِمِنًى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: «صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِنًى رَكْعَتَيْنِ، وَمَعَ أَبِي بَكْرٍ رَكْعَتَيْنِ، وَمَعَ عُمَرَ رَكْعَتَيْنِ، قَالَ الْأَعْمَشُ: فَحَدَّثَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ قُرَّةَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ صَلَّى بَعْدَهَا أَرْبَعًا فَقِيلَ لَهُ: عَتَبَ عَلَى عُثْمَانَ ثُمَّ صَلَّى أَرْبَعًا، قَالَ: فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: الْخِلَافُ أَشَدُّ
‘উসমান (রা.) মিনায় চার রাকাত নামাজ পড়লে ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, আমি রাসূল (সা.)-এর পিছনে দুই রাকাত নামাজ পড়েছি। আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)-এর পিছনেও দুই রাকাত পড়েছি। রাবী বলেন, একথা বলার পরও ইবনে মাসউদ (রা.) চার রাকাত পড়েন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মতানৈক্য করাটা ভালো নয়।’ [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৩৯৮২; সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৮২]
দেখুন, মতভেদ সত্ত্বেও তারা কতটুকু শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন। তাদের মাঝে মতান্তর ছিল, কিন্তু কোনো মনান্তর ছিল না। সুতরাং আমাদের মাঝে মতানৈক্য থাকবেই। এটি ইসলাম ধর্মকে সমৃদ্ধ করে। তবে মতভেদ থাকার কারণে কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কোনোক্রমেই বৈধ হবে না।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8525/article-details.html