প্রশ্ন
বর্তমানে আমরা দেখতে পাই, হুজুরদেরকে কোন একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করলেই একজন একেক রকম উত্তর দেয়। আবার শুনি, কয়েকটি মাযহাবও আছে। একেক মাযহাবে নাকি একেক রকম মাসআলা। সাহাবায়ে কেরামের যামানায় কি এগুলো ছিল?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মানুষের স্বভাব হল, তাদের মাঝে মতের ভিন্নতা থাকবেই। শুধু দ্বীনি বিষয় কেন যে কোন বিষয়েই মতবিরোধ হতে পারে এবং হয়ও। মাসআলা-মাসায়েলের ব্যাপারে মতবিরোধ হতে পারে। আর এ ধরনের মতবিরোধ রাসূল (সা.) এর যামানা থেকেই চলে আসছে। সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও এই মতভিন্নতা ছিল। এর অসংখ্য উদাহরণ হাদিসের কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَنَا لَمَّا رَجَعَ مِنَ الأَحْزَابِ “ لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ الْعَصْرَ إِلاَّ فِي بَنِي قُرَيْظَةَ ”. فَأَدْرَكَ بَعْضُهُمُ الْعَصْرَ فِي الطَّرِيقِ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ نُصَلِّي حَتَّى نَأْتِيَهَا، وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ نُصَلِّي لَمْ يُرَدْ مِنَّا ذَلِكَ. فَذُكِرَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يُعَنِّفْ وَاحِدًا مِنْهُمْ
‘রাসূল (সা.) আহযাব যুদ্ধ হতে ফিরার পথে আমাদেরকে বললেন, বনু কুরাইযার এলাকায় পৌঁছার পূর্বে কেউ যেন আসর সালাত আদায় না করে। কিন্তু অনেকের রাস্তাতেই আসরের সময় হয়ে গেল, তখন তাদের কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে না পৌঁছে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা সালাত আদায় করে নেব, আমাদের নিষেধ করার এ উদ্দেশ্য ছিল না (বরং উদ্দেশ্য ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়া)। রাসূল (সা.)-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করা হলে, তিনি তাঁদের কারোর ব্যাপারে কড়াকড়ি করেননি।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৪৬]
দেখুন, সাহাবায়ে কেরামের এই মতভিন্নতাকে রাসূল (সা.) খারাপ বলেননি। আরেক হাদিসে এসেছে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
الْوُضُوءُ مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ
‘আগুনে রান্না করা খাদ্য খেলে ওযু করতে হবে।’ [সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ৭৯]
অথচ ওযু না করার ব্যাপারে অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে হাদিস বর্ণিত আছে। এই মতের ভিন্নতা বা চিন্তার ভিন্নতার কারণেই চার মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কোনো মাযহাবের ইমাম অপর মাযহাবের ইমামকে কখনো কটাক্ষ করেননি। অথচ আমরা নিজের মতটাকেই হক মনে করি। অন্যের মতটাকে বাতিল মনে করি। একারণেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলো খুললেই আমরা দেখতে পাই একজন অপরজনকে হেয় করে কথা বলছে। কাফের হওয়ার ফাতওয়া দিচ্ছে। অথচ কাফের হওয়ার ফাতওয়া দেওয়া যে কতটা মারাত্মক তা আমরা সকলেই জানি। এসকল কর্মকান্ডের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে উলামায়ে কেরামের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। এজন্য মূলত আমরাই দায়ী। বড় বড় আলেমের মুখ থেকে এমন কথা বের হয় যে আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই।
মতানৈক্য হবে এটি আল্লাহ তাআলাও জানতেন। তাই মতানৈক্য হলে কী করতে হবে তা তিনি বলে দিয়েছেন,
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ
‘অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯]
ইজতিহাদ করতে গিয়ে কারো ভুল হয়ে গেলে আমরা তাকে মাজুর মনে করব। তাদের সাথে দ্বিমত করতে হলে কুরআন হাদিসের আলোকে শ্রদ্ধার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে হবে। সমালোচনা করার ক্ষেত্রে যতটুকু করা দরকার ততটুকু করতে হবে। অথচ আমরা সমালোচনার ক্ষেত্রে লিমিট ক্রস করে গীবত করছি। অপরকে হেয় করে কথা বলছি। আর অপরকে হেয় করার মানসিকতা থেকেই সৃষ্টি হয় অহংকারের। হাদিস শরিফে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন,
الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ
‘অহমিকা হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৭]
সুতরাং আমরা যদি অপরকে সম্মান দিতে শিখি তাহলে মানুষ আমাদেরকে সম্মান দিবে। আল্লাহ তাআলা আমল করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8521/article-details.html