প্রশ্ন
সৌদির সাথে আমাদের তিন ঘন্টার ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও আমরা সৌদির ২১ ঘন্টা পর কেন ঈদ পালন করি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ঈদের চাঁদ দেখার ব্যাপারে স্পষ্ট দলিল বিদ্যমান রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে,
صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ
‘চাঁদ দেখে সিয়াম পালন শুরু করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার (ঈদ) করবে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩৮৬]
আরেকটি হাদিসে এসেছে,
عَنْ كُرَيْبٍ، أَنَّ أُمَّ الْفَضْلِ بِنْتَ الْحَارِثِ، بَعَثَتْهُ إِلَى مُعَاوِيَةَ بِالشَّامِ قَالَ فَقَدِمْتُ الشَّامَ فَقَضَيْتُ حَاجَتَهَا وَاسْتُهِلَّ عَلَىَّ رَمَضَانُ وَأَنَا بِالشَّامِ فَرَأَيْتُ الْهِلاَلَ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ ثُمَّ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فِي آخِرِ الشَّهْرِ فَسَأَلَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ – رضى الله عنهما – ثُمَّ ذَكَرَ الْهِلاَلَ فَقَالَ مَتَى رَأَيْتُمُ الْهِلاَلَ فَقُلْتُ رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ . فَقَالَ أَنْتَ رَأَيْتَهُ فَقُلْتُ نَعَمْ وَرَآهُ النَّاسُ وَصَامُوا وَصَامَ مُعَاوِيَةُ . فَقَالَ لَكِنَّا رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ السَّبْتِ فَلاَ نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلاَثِينَ أَوْ نَرَاهُ . فَقُلْتُ أَوَلاَ تَكْتَفِي بِرُؤْيَةِ مُعَاوِيَةَ وَصِيَامِهِ فَقَالَ لاَ هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
‘কুরায়ব (রহ.) থেকে বর্ণিত। হারিসের কন্যা উম্মুল ফাযল তাকে সিরিয়ায় মুআবিয়া (রা.)-এর নিকট পাঠালেন। কুরায়ব বলেন, অতঃপর আমি সিরিয়া পৌঁছে তার প্রয়োজনীয় কাজ সমাপন করলাম। আমি সিরিয়ায় থাকতেই রমজান এসে গেল। আমি জুমুআর রাতে রমজানের চাঁদ দেখতে পেলাম। অতঃপর মাসের শেষদিকে আমি মদীনায় ফিরে এলাম। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) রোজা সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কখন চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, আমি তো জুমুআর রাতেই চাঁদ দেখেছি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজেই কি তা দেখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ, অন্যান্য লোকেরাও দেখেছে এবং তারা রোজা পালন করেছে। এমনকি মুআবিয়া (রা)-ও রোজা পালন করছেন। তিনি বলেন, আমরা তো শনিবার রাতে চাঁদ দেখেছি, আমরা পূর্ণ ত্রিশটি রোজা রাখব অথবা এর আগে যদি চাঁদ দেখতে পাই তাহলে তখন ইফতার করব। আমি বললাম, আপনি কি মুআবিয়া (রা.)-এর চাঁদ দেখা ও রোজা পালন করাকে (রমজান মাস শুরু হওয়ার জন্য) যথেষ্ট মনে করেন না? তিনি বললেন, না, রাসূল (সা.) আমাদের এভাবেই (চাঁদ দেখে রোজা পালন করা ও ইফতার করার জন্য) নির্দেশ দিয়েছেন।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪১৮]
হাদিসে দেখা যাচ্ছে, ইবনে আব্বাস (রা.)-ও অন্য দেশের চাঁদের উপর ভিত্তি করে ঈদ পালনে সম্মত হননি। এই হাদিসের উপর ভিত্তি করেই উলামায়ে কেরামগণ বলেন, এক দেশের চাঁদ অন্য দেশের জন্য যথেষ্ট হবে না। বরং প্রত্যেক দেশের লোকেরা চাঁদ দেখেই রোজা রাখবে ও ঈদ করবে।
দেখুন, এবার সৌদি ত্রিশটি রোজা পূর্ণ করছে। অথচ আফ্রিকার দেশ আইভরিকোস্টসহ আরো কয়েকটি দেশ আগে ঈদ করছে। সৌদির কাছে এ সংবাদ পৌঁছলেও তারা কিন্তু তাদের অনুসরণ করেনি। বরং তারা চাঁদ দেখেই ঈদ করবে।
কাজেই ঈদ পালনের বিষয়টি চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত। এমন নয় যে, সৌদির একদিন পরই আমাদের ঈদ করতে হবে। বরং আজকে আমাদের উনত্রিশ রোজা গিয়েছে। যদি আমরা আজকে চাঁদ দেখতাম তাহলে আগামীকাল সৌদির সাথেই ঈদ করতাম।
আবার প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিকভাবেও এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত যে, চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এক স্থানে চাঁদ উঠলে আরেক স্থানেও চাঁদ উঠবে- বিষয়টি এমন নয়। কাজেই আমাদের জন্য শরিয়তের নির্দেশনা হল, আমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখব। চাঁদ থেকে ঈদ করব। অন্য দেশের চাঁদ আমাদের দেশের জন্য ধর্তব্য হবে না।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8471/article-details.html