প্রশ্ন
কখনো কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে তখন মুমিনদের কর্মপন্থা কী হবে? তাদের করণীয় কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মুমিনগণ নিম্নোক্ত কাজগুলো করবে।
১. আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা। কারণ, বান্দার পাপাচারের কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে থাকেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ
‘আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।’ [সূরা শুরা, আয়াত: ৩০]
কাজেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমাদের পরিত্রাণের কোনো পথ নেই।
২. আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর ধৈর্য ধারণ করা।
৩. আল্লাহ ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করা। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে তওবা করা। সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া। হাদিসে বর্ণিত দোয়া করা। যেমন,
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮৮]
৪. অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার অনেক ফজিলত। অসুস্থ ব্যক্তিকে কেউ দেখতে গেলে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে থাকে। হাদিস শরিফে এসেছে,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِيَ وَإِنْ عَادَهُ عَشِيَّةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنَّةِ
‘কোন মুসলমান যদি অন্যকোন মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দুআ করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে সত্তর হাজার ফিরিশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দু’আ করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরী হয়।’ [সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ৯৬৯]
কাজেই অসুস্থ ব্যক্তির পাশে আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে। এমনিভাবে মহামারিতে কেউ মারা গেলে সে শহিদি মর্যাদা লাভ করে থাকে। হাদিস শরিফে এসেছে,
وَمَنْ مَاتَ فِي الطَّاعُونِ فَهُوَ شَهِيدٌ
‘যে ব্যক্তি মহামারিতে মারা যায় সে শহিদ।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৮৩৫]
৫. আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. মহামারিতে কেউ মারা গেলে তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থার জন্য একটি দল গঠন করা।
৭. আক্রান্ত এলাকায় বাহিরের লোকেরা সফর করবে না। ভিতরের লোকেরা অন্য এলাকায় সফর করবে না। হাদিসে এমন নির্দেশ আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,
فَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَلَسْتُمْ بِهَا فَلاَ تَهْبِطُوا عَلَيْهَا
‘অতএব, কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হতে চলে এসো না। অপরদিকে কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না।’ [সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ১০৬৫]
৮. প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের কামাই রুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাদের সহায়তায় সমাজের বিত্তশালীদের সাধ্যমত এগিয়ে আসতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এসকল বিষয়ের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8427/article-details.html