প্রশ্ন
অনেকে বলে থাকে রাসূল (সা.) যে ধর্ম নিয়ে আগমন করেছিলেন সে ধর্ম তৎকালীন সময়ে সমাজ বিনির্মাণে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের এ উৎকর্ষের যুগে সে ধর্ম সমাজ বিনির্মাণে যথেষ্ট নয়। এর বিপক্ষে কী যুক্তি হতে পারে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
যারা এ ব্যাখ্যা করে থাকে তারা মূলত ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারেনি। ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন ব্যবস্থা, অন্যান্য ধর্মের মত অপূর্ণাঙ্গ নয়- এই বিষয়টি তারা অনুধাবন করতে পারেনি। একারণেই তো আমরা দেখি, ইসলাম ছাড়া এক মুহূর্তও চলা সম্ভব নয়। আমরা কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন, ইসলামের বিধান হল সৎ ভাবে ব্যবসা করা। এখন কেউ যদি ইসলামকে বাদ দিয়ে চলতে চায় তাহলে সৎ ভাবে ব্যবসা করতে পারবে না। ইসলামের বিধান হল ওয়াদা রক্ষা করা। এখন কেউ যদি ইসলামকে বাদ দিয়ে চলতে চায় তাহলে সর্বদা ওয়াদা ভঙ্গ করে চলতে হবে। ইসলামের বিধান হল মানুষের অধিকার রক্ষা করা। এখন কেউ যদি ইসলামকে বাদ দিয়ে চলতে চায় তাহলে মানুষের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
দেখুন, রাসূল (সা.)-এর উপর সর্বপ্রথম যে পাঁচটি আয়াত নাজিল করা হয়েছিল তাতেই ইঙ্গিত রয়েছে যে ইসলাম কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের ধর্ম। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন,
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (1) خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ (2) اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ (3) الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ (4) عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ (5)
‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে। পড়, আর তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ [সূরা আলাক, আয়াত: ১-৫]
সর্বশেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন, ‘যা সে জানত না’ অর্থাৎ একটু আগেও যা তারা জানা ছিল না। মানে প্রতিনিয়ত আল্লাহ তাআলা মানুষের জ্ঞানের মাঝে নতুন বিষয়ের সংযোজন করবেন এটি প্রায় পনেরশত বছর আগেই বলে দিয়েছেন। বর্তমানে বিজ্ঞানের এত উৎকর্ষ- এ ব্যাপারেও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন যে, তিনি মানুষকে শিক্ষা দিবেন। এখন ধর্মকে যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে পুরো বিজ্ঞানকে অস্বীকার করতে হবে।
রাসূল (সা.) সারা জীবন মানুষের অধিকারের কথা বলে গেছেন। বিদায় হজ্বে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন,
إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا
‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত ও সম্পদ (পরস্পরের জন্য) আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই শহরের মতোই সম্মানিত।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৯০৫]
এটিই হল ধর্মের কথা। এটি মানুষের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। এখন কেউ যদি ধর্মকে বাদ দিয়ে চলতে চায় তাহলে মানবাধিকার বাদ দিয়ে চলতে হবে। কাজেই ইসলাম ধর্মকে বাদ দিলে জীবন অচল হয়ে যাবে।
সুতরাং যারা ধর্মকে বাদ দিয়ে চলতে চায় তাদের এ দাবি একেবারেই অযৌক্তিক। তারা হয়ত ধর্মকে বুঝেনি, অথবা তাদের এ বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলক। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ধর্মের জ্ঞান পরিপূর্ণভাবে অর্জন করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8129/article-details.html