প্রশ্ন
অনেকে বলে থাকে, ইসলাম ব্যাকডেটেড ধর্ম। প্রায় পনেরশত বছর আগে রাসূল (সা.)-এর আনীত ধর্মে আধুনিক সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে বর্তমান যুব-সমাজ ভিন্ন মত বা পথের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আসলে ইসলাম কি ব্যাকডেটেড ধর্ম না মর্ডান ধর্ম?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম ব্যাকডেটেড কোনো ধর্ম নয়। বরং ইসলাম অত্যাধুনিক, বাস্তবভিত্তিক, বিজ্ঞানমনস্ক একটি ধর্ম। যেটি বাস্তব, যুক্তিগ্রাহ্য, সহজ ও সরল সেটিই ইসলাম। আর যেটি অবাস্তব, অযৌক্তিক, কঠিন ও জটিল সেটি ইসলাম নয়। বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের কোনো সংঘর্ষ নেই। বিজ্ঞান যত আগাচ্ছে, ইসলাম যে খোদা-প্রদত্ত ধর্ম এ বিষয়টি তত প্রমাণিত হচ্ছে। যেমন দেখুন, বর্তমানে এই করোনা ভাইরাসের কারণে ডাক্তাররা লকডাউন, আইসোলেশন ও স্বচ্ছ নিরাপত্তার কথা বলছেন। অথচ এই কথাগুলো দেড় হাজার বছর আগে স্বয়ং রাসূল (সা.) বলে গিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,
إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَدْخُلُوهَا وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا
‘যখন তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭২৮]
এই হাদিস থেকেই বুঝা যায়, ইসলাম কোনো ব্যাকডেটেড ধর্ম নয়। আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। বর্তমানে আইসোলেশনের কথা বলা হচ্ছে। এই কথাই দেড় হাজার বছর আগে রাসূল (সা.) বলে গিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে,
لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ
‘ব্যাধিযুক্ত উটপালের মালিক (অসুস্থ উটগুলোকে) সুস্থ উটপালের মালিকের (উটের) ধারে কাছে আনবে না।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৬৮৪]
এই হাদিস থেকে বুঝা যায়, অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তি থেকে আলাদা থাকতে হবে। বর্তমানে মুসাফাহ থেকে বিরত থাকা ও সোশ্যাল ডিসটেন্সের কথা বলা হচ্ছে। অথচ রাসূল (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই সোশ্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করেছিলেন। হাদিস শরিফে আছে,
كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ
‘সাকীফ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যে জনৈক কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। রাসূল (সা.) তার নিকট (খবর) পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বাইআত করে নিয়েছি। সুতরাং তুমি ফিরে যাও।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৭১৫]
আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِ
‘কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭০৭]
এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি বিষয় এসে যায় যে, রাসূল (সা.) আরেকটি হাদিসে বলেছিলেন,
لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ
‘রোগের কোন সংক্রমণ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭০৭]
এই হাদিস এবং আগের হাদিসগুলো বাহ্যত দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এই দুই হাদিসের মাঝে কোনো বৈপরিত্য নেই। কারণ, মেডিকেল সাইন্স সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা জানে, ডাক্তাররা বলে থাকে, রোগ দুই ধরণের। কিছু রোগ সংক্রমিত হয় না। যেমন, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা। আর কিছু রোগ আছে যেগুলো সংক্রমিত হয়। যেমন, ইবোলা, এইডস, বর্তমানে করোনা। দেখুন, রোগের মাঝে কিছু রোগ সংক্রমিত হয়, আর কিছু হয় না- এ বিষয়টি রাসূল (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই বলে গিয়েছেন। এ থেকেই বুঝা যায় যে, ইসলাম সত্য ধর্ম, আধুনিক ধর্ম।
আজ ইসলামকে ব্যাকডেটেড ধর্ম বলা হচ্ছে। অথচ বিজ্ঞান যখন অন্ধকারে ছিল তখন সেই দেড় হাজার বছর আগে কুরআন হাদিসে বিজ্ঞানের এমন সব বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বর্তমান বিজ্ঞানীরাও তাতে অবাক হয়ে যায়। যেমন, বর্তমানে আমরা জেনেটিক ইনফরমেশনের কথা বলি। জেনেটিক ইনফরমেশন হল, ডিম্বানু শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার পর জরায়ুর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে প্রাথমিক অবস্থানের সময়ই নির্ধারণ হয়ে যায় যে, বাচ্চাটির লিঙ্গ কি হবে? তার আয়ুষ্কাল কত হবে? সুস্থ না অসুস্থ হবে? এমনকি তার স্বভাব-প্রকৃতিও সে সময় নির্ধারণ হয়ে যায়। অথচ এই কথা কুরআনে দেড় হাজার বছর আগেই বলে দেওয়া হয়েছে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ
‘শুক্র বিন্দু হতে তিনি তাকে সৃষ্টি করেন, পরে তার পরিমিত বিকাশ সাধন করেন।’ [সূরা আবাসা, আয়াত: ১৯]
আয়াতে বলা হয়েছে, পরিমিত বিকাশ সাধন করা হয় তথা, তাকদীর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, সে ছেলে হবে না মেয়ে হবে? তার রিযিক কি হবে? তার সুস্থতা, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় সে সময় লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়।
সুতরাং বুঝা গেল, ইসলাম একটি বিজ্ঞানমনস্ক ধর্ম। ন্যাচারাল ধর্ম।
কুরআন যে সত্য তা মানুষের সামনে উদ্ভাসিত করে দেওয়ার দায়িত্ব খোদ আল্লাহ তাআলাই নিয়েছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ
‘বিশ্বজগতে ও তাদের নিজদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (কুরআন) সত্য।’ [সূরা হা মীম আস সাজদা, আয়াত: ৫৩]
বর্তমানে বিজ্ঞানের মাধ্যমে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মানুষ বুঝতে পারছে যে, কুরআন সত্য। ইসলাম সত্য ধর্ম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8123/article-details.html