প্রশ্ন
বর্তমান করোনাকালে অনেক মানুষ অসহায়-অভাবী অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। সে সকল অসহায়-অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কুরআনের কোন কোন আয়াত আমাদেরকে উৎসাহ যোগাতে পারে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা জীবন যাপন করছি। এমন পরিস্থিতি অতীতেও এসেছিল। ভবিষ্যতেও আসবে। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় লোকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, তাদের অভাব দূর করার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনের অসংখ্য আয়াত নাজিল করেছেন। সমাজের যারা দায়িত্বশীল হবেন তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা নির্দেশ জারী করেছেন,
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ
‘তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।’ [সূরা হজ্ব, আয়াত: ৪১]
আয়াতে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম চারটি কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর প্রথমটি হল, নামাজ কায়েম করা। নামাজ কায়েমের মাধ্যমে সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার ও অশ্লীলতা দূর হয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
‘নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।’ [সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫]
দ্বিতীয়টি হল, যাকাত দেওয়া। ধনীদের মনে রাখতে হবে, যাকাত গরিবদের প্রতি করুনা নয়। বরং গরিবরা ধনীদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করছে। কারণ কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
‘আর তাদের ধনসম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক।’ [সূরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯]
কোনো ধনী ব্যক্তি যদি গরিবদের এ প্রাপ্য আদায় না করে, তাহলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কিয়ামতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
ধনীদের মালে যাকাত ফরজ করার কারণ হল, সকল ধন-সম্পদ যেন ধনীদের হাতে কুক্ষিগত না হয়ে যায়। বরং সমাজের গরিবরাও যেন সে সম্পদের ফায়দা ভোগ করতে পারে। কিছুটা সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করতে পারে। একারণেই কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ
‘যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে।’ [সূরা হাশর, আয়াত: ৭]
দান শুধু যাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং নিজ খরচের উদ্বৃত্ত অংশও গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান করার কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে যখন সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তখন জবাবে বলা হয়েছিল,
وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ
‘আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে। বল, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৯]
এটিই হল ইসলামের বিধান। আর যারা তাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করে রাখবে কিয়ামতের দিন এ সম্পদগুলো তাদের জন্য আযাবের কারণ হবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (34) يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ (35)
‘এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর।’ [সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৪-৩৫]
কাজেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামে আবশ্যকীয় একটি বিষয়। রাসূল (সা.) এ কাজে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য বলেছেন,
وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ
‘যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে সে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলাও তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ১৪২৫]
সুতরাং বর্তমান এ করোনার পরিস্থিতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মোক্ষম সুযোগ। ধনীদের উচিত সম্পদ জমা করে না রেখে নিজ প্রয়োজন উদ্বৃত্ত সম্পদ অসহায়-গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/8117/article-details.html