প্রশ্ন
বর্তমানে বছরের এক দিন সারা বিশ্বে মা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ইসলাম এটিকে কীভাবে দেখে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
পিতা-মাতার সাথে সদাচার করা সন্তানের উপর ফরজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
‘তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৩৬]
মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার সাথে সদাচারের নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন মাজিদের আঠারো স্থানে সুস্পষ্টভাবে পিতা-মাতার প্রতি সদাচার ও ভালো ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে। এই নির্দেশ শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির জন্যই নয়। বরং সকল উম্মতের জন্য ছিল। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
‘আর স্মরণ কর, যখন আমি বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতার সাথে।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ৮৩]
শুধু কুরআনেই না, বরং হাদিসেও পিতা-মাতার সাথে সদাচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
سَأَلْتُ النَّبِيَّ أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ
‘আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, যথা সময়ে সালাত আদায় করা। ইবনে মাসউদ (রা.) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, অতঃপর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫২৭]
আরেক হাদিসে এসেছে,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِي قَالَ ” أُمُّكَ ”. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ” أُمُّكَ ”. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ” أُمُّكَ ”. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوكَ
‘এক লোক রাসূল (সা.)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল, অতঃপর কে? নবী (সা.) বললেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, অতঃপর তোমার বাবা।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৭১]
সুতরাং পিতা-মাতার খেদমত করা, তাদের সাথে সদাচার করা ইসলামের একটি ফরজ বিধান। তারা যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতেই হবে। এমনকি তাদের মৃত্যুর পরও তাদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
‘আর বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেমনভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন।’ [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৪]
কাজেই পিতা-মাতার সাথে সদাচার, বিশেষ করে মায়ের সাথে উত্তম আচরণ করা নির্দিষ্ট একটি দিনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বরং ইসলামের বিধান হল, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাদের সাথে সদাচার করতে হবে। তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/7865/article-details.html