প্রশ্ন
একটি হাদিসে পড়েছি, রোজা ঢাল স্বরূপ। আমার প্রশ্ন হল, রোজা কীভাবে ঢাল হিসেবে কাজ করে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আল্লাহ তাআলা রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন,
لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
‘যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায়ই রাসূল (সা.) খুব ছোট্ট করে বলেছেন,
الصِّيَامُ جُنَّةٌ
‘রোজা (একটি) ঢাল।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৪]
যে ব্যক্তি তাকওয়া অর্জন করতে পারবে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখবেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي نُورِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَنْ كَانَ تَقِيًّا
‘এই সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমি আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে।’ [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬৩]
রোজা ঢাল স্বরূপ। তা কী কী বিষয় থেকে রক্ষা করবে এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে বলে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে,
الصَّوْمُ جُنَّةٌ مِنَ النَّارِ كَجُنَّةِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْقِتَالِ
‘রোজা জাহান্নামের অগ্নি থেকে ঢাল স্বরূপ, তোমাদের যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের ন্যায়।’ [সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ২২৩৫]
রোজা যাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে সে প্রকৃতপক্ষেই রোজার উদ্দেশ্য লাভে সফলকাম হবে।
রোজার মূল উদ্দেশ্যই হল মানুষকে মুত্তাকী বানানো। আর তাকওয়া বলা হয়, গুনাহের সম্ভবনাযুক্ত কাজ থেকে বেঁচে থাকাকে। যে ব্যক্তি রোজা রেখে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখতে পারবে তার জন্য রোজা ঢাল স্বরূপ কাজ করবে। তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে। এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা কাযী বায়যাবী (রহ.) বলেছেন,
لَيْسَ الْمَقْصُودُ مِنْ شَرْعِيَّةِ الصَّوْمِ نَفْسَ الْجُوعِ وَالْعَطَشِ بَلْ مَا يَتْبَعُهُ مِنْ كَسْرِ الشَّهَوَاتِ وَتَطْوِيعِ النَّفْسِ الْأَمَّارَةِ لِلنَّفْسِ الْمُطْمَئِنَّةِ فَإِذَا لَمْ يَحْصُلْ ذَلِكَ لَا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِ نَظَرَ الْقَبُولِ
‘মানুষকে ক্ষুধা ও পিপাসায় কষ্ট দেওয়ার জন্য রোজা ফরজ করা হয়নি। বরং মানুষের শাহওয়াত অবদমিত করতে ও মানুষের নফসে আম্মারাকে ভালো নফসের অনুগত করতে রোজা ফরজ করা হয়েছে। যদি এই বিষয়টি হাসিল না হয় তাহলে আল্লাহ তাআলা তার এ রোজাকে কবুল করবেন না।’ [ফাতহুল বারী ৪/১১৭]
আল্লামা ইবনুল আসীর তার কিতাবে হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন,
يَقِي صاحِبَه مَا يُؤذِيه مِنَ الشَّهَوات
‘রোজা ব্যক্তিকে তার শাহাওয়াত থেকে বিরত রাখে।’ [আন নিহায়া ১/৩০৮]
এ কারণেই আমরা হাদিসে দেখতে পাই রাসূল (সা.) যুবকদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
‘হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা যৌন ক্ষমতাকে দমন করে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৫]
সুতরাং রোজা যদি আমাদেরকে শাহওয়াত থেকে বিরত রাখে তাহলে বুঝা যাবে যে রোজা ঢাল হিসেবে কাজ করছে।
এমনিভাবে, রোজা যদি মানুষকে যাবতীয় খারাপ চরিত্র থেকে, সকল গুনাহ ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে তাহলে বুঝতে হবে রোজা ঢাল রূপে কাজ করছে। অথচ রমজান আসলে আমরা লক্ষ্য করি যে, অসংখ্য রোজাদার পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করলেও পাপাচার বর্জন করে না। সে সকল ব্যক্তিদের জন্য রোজা ঢাল স্বরূপ কাজ করে না। এ কারণেই রাসূল (সা.) বলেছেন,
كَمْ مِنْ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الظَّمَأُ، وَكَمْ مِنْ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ
‘অনেক রোজাদার এমন আছে যারা তাদের রোজা দ্বারা ক্ষুধার্ত থাকা ছাড়া আর কোন ফল লাভ করতে পারে না। এমন অনেক কিয়ামরত (দন্ডায়মান) ব্যক্তি আছে যাদের রাতের ইবাদাত নিশি জাগরণ ছাড়া আর কোন ফল আনতে পারে না।’ [সুনানে দারেমী, হাদিস: ২৭৬২]
দেখুন, রোজা তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। পানাহার, কামাচার ও পাপাচার। যে এই তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকবে তার রোজা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
এমনিভাবে রোজা ঐ সকল ব্যক্তিদের জন্য ঢাল স্বরূপ কাজ করবে যারা রোজা রেখে নির্বোধদের সাথে চলাফেরা করবে না। নির্বোধের মত আচরণ করবে না। ঝগড়ায় লিপ্ত হবে না। এ কারণে রাসূল (সা.) বলেছেন,
الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَإِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَجْهَلْ فَإِنْ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي صَائِمٌ إِنِّي صَائِمٌ
‘রোজা (একটি) ঢাল, কাজেই তোমাদের যে কেউ রোজাদার হও, সে বাজে কথা বলবে না এবং বর্বরতার কাজ করবে না। যদি কোনো ব্যক্তি তাকে গালি দেয় অথবা কাটাকাটি-মারামারি করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৪]
এমনিভাবে রোজা মানুষকে যাবতীয় ঘৃণিত কাজ থেকে বিরত রাখবে। আখিরাতে লাঞ্চিত করে এমন কাজ থেকে ফিরিয়ে আনবে। তাকে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী বানাবে। তার কলবকে পবিত্র করবে। ঈমানকে সমৃদ্ধ করবে। ফলে এই রোজার মাধ্যমে সে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভ করবে। এই রোজা তার জন্য দুর্গ স্বরূপ হবে। দুর্গে আশ্রয় নিয়ে মানুষ যেভাবে আত্মরক্ষা করতে পারে। ঠিক সেভাবে এই রোজাও তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/7859/article-details.html