প্রশ্ন
আমি জানি, আত্মশুদ্ধির বিষয়টি অনেক জরুরি। আমি সে জন্য চেষ্টাও করি। আত্মশুদ্ধির কী কী সুযোগ রমজান আমাদেরকে তৈরি করে দেয়?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
রমজানে আল্লাহর ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, সাহরী-ইফতারের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার সাধনায় আত্মনিয়োগ করি। দেখুন, মানুষের মাঝে পরস্পর বিরোধী দুটি সত্ত্বা কাজ করে। একটি হল রূহ। অপরটি হল নফস। আমরা আল্লাহর ভয়ে রমজানে দিনের বেলা পানাহার ও বৈধ যৌনাচার থেকে বিরত থাকি। এই সাধনার মাধ্যমে আমাদের নফস অবদমিত হয়ে যায়। আমাদের রূহের মাঝে এ বিশেষ শক্তি অর্জিত হয়ে যায়। এই বিশেষ শক্তির মাধ্যমে বাকি এগার মাস আত্মশুদ্ধির পথে চলা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
আমাদের জীবনে আত্মশুদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا (9) وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا (10
‘সেই সফলকাম হয়েছে যে নিজ আত্মাকে পবিত্র করেছে। সেই ব্যর্থ হয়েছে যে নিজ আত্মাকে কলূষিত করেছে।’ [সূরা শামস, আয়াত: ৯-১০]
হাদিস শরিফে এসেছে,
فَقَالَ رَجُلٌ: وَمَا تَزْكِيَةُ الْمَرْءِ نَفْسَهُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: يَعْلَمُ أَنَّ اللهَ مَعَهُ حَيْثُ كَانَ
‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল, তাযকিয়ায়ে নফস (আত্মশুদ্ধি) কী জিনিস? রাসূল (সা.) বললেন, কারো মাঝে এই অনুভূতি চলে আসা যে, সে যেখানেই থাকুক আল্লাহ তার সাথে রয়েছেন।’ [শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩০২৬]
আল্লাহ তাআলা আমাকে সর্বদা দেখছেন, আমার প্রতিটি কাজকর্ম মনিটরিং করছেন। এই অনুভূতির নামই মূলত আত্মশুদ্ধি।
রমজানে রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রবৃত্তির সাথে যুদ্ধ করে থাকি। তাই মাহে রমজান আত্মশুদ্ধির এক মোক্ষম সুযোগ।
দেখুন, রোজা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই হয়ে থাকে। দরজা বন্ধ করে আমরা যদি পানাহার করি তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দেখবে না। কিন্তু তারপরও আমরা পানাহার থেকে বিরত থাকি। এ কারণেই একটি হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ হয়েছে,
الصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
‘সওম আমার জন্যই, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৪৯২]
রমজানের সাথে আত্মশুদ্ধির এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রোজার মাধ্যমে আমরা যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারি। নাসিরুদ্দীন চেরাগ দেহলভী (রহ.) নামে একজন বড় সুফী সাধক বলেছেন, ‘মানুষের মাঝে প্রবৃত্তি একটি বৃক্ষ, যা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। আমরা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে এই বৃক্ষ মূলোৎপাটন করা সম্ভব হয়ে যায়।’
তাই আমাদের প্রত্যেককেই এই রমজানে আত্মশুদ্ধির পথে এগিয়ে আসা উচিৎ। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/7769/article-details.html