প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় কিছুদিন আগে একটি গায়েবানা জানাযার আয়োজন করা হয়। এ নিয়ে এলাকার লোকেরা দুই দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক দলের মতে গায়েবানা জানাযা জায়েয নেই, আর আরেক দলের মতে জায়েয এবং তারা দলিল দেয়, রাসূল (সা.) বাদশা নাজাশীর গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, কোন দলের বক্তব্য সঠিক? দলিলসহ জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলামি শরিয়তে গায়েবানা জানাযা জায়েয নেই। সাহাবীদের জানাযার নামায পড়ার প্রতি রাসূল (সা.) এর প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও যে সকল সাহাবী মদীনার বাহিরে ইন্তেকাল করেছেন তাদের গায়েবানা জানাযার নামাজ পড়েছেন, এমন কোনো প্রমাণ হাদিসের কোনো কিতাবে নেই। তাই এ কাজটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে জানাবে। কারণ আমার জানাযা নামায তার জন্য রহমত।’[সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩০৮৩]
উল্লেখ্য, বাদশা নাজাশীর জানাযা পড়া দিয়ে ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাযাকে বৈধ করার জন্য দলিল দেওয়া যাবে না। কারণ হাদিসটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বললেন, তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় করো। ইমরান (রা.) বলেন, অতপর রাসূল (সা.) দাঁড়ালেন। আর আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা ছিল।’[মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২০০০৫; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩০৯৮]
‘অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, বাদশা নাজাশী এমন দেশে ইন্তেকাল করেছিলেন যেখানে তার জানাযার নামাজ পড়ার মত কেউ ছিল না। তাই রাসূল (সা.) তার জানাযার নামাজ পড়েছিলেন।’ [ফয়যুল বারী ২/৪৭০; যাদুল মাআদ ১/৫০২]
এই একটি ঘটনা ছাড়া হাদীসের কিতাবে এমন একটা হাদিসও নেই যে, রাসূল (সা.) অন্য কারো গায়েবানা জানাযার নামাজ পড়েছেন। তাই এই একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার ভিত্তিতে গায়েবানা জানাযাকে বৈধ বলা যায় না।
সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪০৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; ইলাউস সুনান ৮/২৮৩
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/5241/article-details.html