প্রশ্ন
আমার ও আমার স্বামীর যৌথ উপার্জনে আমাদের সংসার চলে। আমি একটি হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম রুমে ডিউটি করি। আমার একটা ছেলে মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়ে। একদিন হঠাৎ সে মাদ্রাসা হতে পালিয়ে যায়। সেদিনই তাকে খুঁজে পাই। খুঁজে পাওয়ার পূর্বে আমি বলেছিলাম, আল্লাহ! যদি আমি ছেলেকে খুঁজে পাই তাহলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাব। কিন্তু পরে আর চাকরিটা ছাড়া হয়নি। কিছুদিন পর ছেলেটা আবারও মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়। এবার আমি জায়নামাযে বসে কোরআন শরীফ সামনে রেখে বলেছিলাম, আল্লাহ! আমি এই শেষবারের মতো আপনার কাছে ওয়াদা করছি, ছেলেকে ফিরে পেলে আমি চাকরিটা ছেড়ে দিব। পরে ছেলেকে খুঁজে পাই। কিন্তু এবারও আমি আর্থিক সমস্যার কারণে চাকরিটা ছাড়তে পারছি না। এদিকে ছেলে এখন বলছে যে, সে আর ঢাকায় পড়বে না, গ্রামের কোনো মাদরাসায় পড়বে। এখন আমার জানার বিষয় হলো,
(ক) ছেলেকে কি হেফজ পড়াব?
(খ) আল্লাহর কাছে কৃত ওয়াদা ভঙ্গের বিধান কি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
(ক) সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া প্রত্যেক পিতা-মাতার ঈমানী দায়িত্ব। সুতরাং আপনি আপনার ছেলেকে হেফজ পড়াবেন। কেননা হাফেজে কোরআন ও তার পিতা-মাতা সম্পর্কে হাদিসে অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদিসে এসেছে,
‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়বে এবং তার ওপর আমল করবে, তার পিতা-মাতাকে কেয়ামতের দিন একটি মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলো অপেক্ষা বেশি হবে। যদি সেই সূর্য তোমাদের ঘরে হয়!সুতরাং যে ব্যক্তি নিজে কোরআনের উপর আমল করে তার সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা?!’ [সুনানে আবু দাউদ; হাদিস: ১৪৫৩]
তবে আপনার ছেলে যদি হেফজ পড়তে না চায় তাহলে প্রথমে তাকে ভালভাবে বুঝাবেন এবং প্রয়োজনে শাসন করবেন।
কিন্তু তাকে এমন শাসন বা চাপ প্রয়োগ করা যাবে না, যাতে সে মাদ্রাসায় পড়া ছেড়ে দেয়। কেননা হিফজ পড়া ফরজে আইন নয়। এজন্য সেই অবস্থায় আপনি তাকে মাদরাসার অন্য কোনো বিভাগে ভর্তি করে দিতে পারেন।
(খ) শরিয়তের দৃষ্টিতে মান্নত সংঘটিত হওয়ার জন্য মান্নতকৃত কাজটি ইবাদত-বন্দেগির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি শরিয়তে এ কাজটির সদৃশ অন্য কোনো ফরজ বা ওয়াজিব বিধান বিদ্যমান থাকাও পূর্বশর্ত।
সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত চাকরি ছেড়ে দেয়ার মান্নতটি উল্লিখিত শর্তানুযায়ী সংঘটিত না হওয়ায় তা পুরা করা ওয়াজিব নয়। অবশ্য সম্ভব হলে আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা উচিত। আর বিকল্পভাবে ঘরের ভিতর থেকে অন্য কোনো হালাল উপায়ে আয়-রোজগার করার ফিকির করুন।
ফাতাওয়া শামী ৩/৭৩৫, ৭৩৬, ৭৪০; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৩৩৬
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/4824/article-details.html