প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় একজন এ্যাবনরমাল ব্যক্তি আছে। অনেককেই দেখি তার দিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে তাকায়। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের এরূপ আচরণের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? আর আমি যদি এই ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করি কিন্তু সে সুস্থ না হয় তাহলে কি আমি এর প্রতিদান পাব?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম মানবতার ধর্ম। সুতরাং ইসলাম কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাকে সমর্থন করে না। কুরআন-হাদিসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই উক্ত ব্যক্তিদের এ কাজটি সঠিক নয়। এক্ষেত্রে তাদের জন্য উচিত তার প্রতি সহমর্মিতা দেখানো এবং সর্বক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করা।
কুরআন মাজিদে ইরশাদ হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোন নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো যালিম।’ [সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১১-১২]
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘মা‘রূর (রহ.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবু যর (রা.)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে বললেন, আবু যর! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ তাআলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩০]
আর অবশ্যই আপনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দ্বারা আপনি সওয়াব লাভ করবেন। চাই সে সুস্থ হোক বা না হোক। কারণ সুস্থ হওয়া না হওয়ার সাথে বান্দার ক্ষমতার কোনো সম্পর্ক নেই। কাউকে সুস্থ করা বান্দার দায়িত্ব নয়। বান্দার দায়িত্ব কেবল চেষ্টা করা। তাই এতেই আপনি সওয়াব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/4736/article-details.html