প্রশ্ন
আমি একজন মা। আমি জানতে চাচ্ছি, ইসলামে মা হিসেবে একজন নারীর কী অধিকার রয়েছে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মা হিসেবে একজন নারীর যত অধিকার থাকতে পারে, ইসলাম যথাযথভাবে একজন নারীকে সে অধিকার প্রদান করেছে। মায়ের প্রতি অনুগ্রহ করা, মায়ের সাথে সদাচার করা, মায়ের আনুগত্য করা সন্তানের উপর আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে। মায়ের সন্তুষ্টিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এমনকি মায়ের প্রতি বিরক্ত হয়ে কোনো সন্তানের জন্য উফ শব্দ উচ্চারণ করাও হারাম। বাবার অনুপস্থিতিতে মায়ের ভরণ-পোষণ সন্তানের উপর অপরিহার্য করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি হাদিসে এটিও বলে দেওয়া হয়েছে যে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। মোটকথা একজন মা হিসেবে যত বৈধ অধিকার পাওয়ার উপযুক্ত ইসলাম তাকে সবকিছুই দিয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াত ও কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো।
কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ اِحۡسٰنًا
‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি।’ [সূরা আহকাফ, আয়াত: ১৫]
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ اَوۡ کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡہَرۡہُمَا وَ قُلۡ لَّہُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا
‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল।’ [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪]
হাদিস শরিফে এসেছে-
معاوية بن جاهمة السلمى ، قال : أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت : يا رسول الله ! إنى كنت أردت الجهاد معك ، أبتغى بذلك وجه الله ، والدار الآخرة . قال ويحك ! أحية أمك ؟ قلت : نعم . قال ارجع فبرها ثم أتيته من الجانب الآخر ، فقلت : يا رسول الله ! إنى كنت أردت الجهاد معك . أبتغى بذلك وجه الله ، والدار الآخرة .قال ويحك ! أحية أمك ؟ قلت : نعم . يا رسول الله ! قال فارجع إليها فبرها ثم أتيته من أمامه ، فقلت : يا رسول الله ! إنى كنت أردت الجهاد معك أبتغى بذلك وجه الله والدار الآخرة . قال ويحك ! أحية أمك ؟ ” قلت : نعم . يا رسول الله ! قال ” ويحك ! الزم رجلها. فثم الجنة
‘মুয়াবিয়া বিন জাহিমা আল-সুলামি (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই; এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও আখেরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: ফিরে গিয়ে তার সেবা কর। এরপর আমি অন্যভাবে আবার তাঁর কাছে এসে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও আখেরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তার কাছে ফিরে গিয়ে তার সেবা কর। এরপরও আমি তাঁর সামনে থেকে এসে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও আখেরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তুমি তার পায়ের কাছে পড়ে থাক। সেখানেই জান্নাত রয়েছে।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৭৮১]
আরেক হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوكَ
‘আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রাসূল (সা.) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: অতঃপর কে? রাসূল (সা.) বললেন: তোমার মা। সে বলল: অতঃপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। সে বলল: অতঃপর কে? তিনি বললেন: অতঃপর তোমার বাবা।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৭১]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/4709/article-details.html