প্রশ্ন
হাদিসে খারেজীদের ব্যাপারে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী আছে কি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
রাসূল (সা.) খারেজীদের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছেন। নিম্নে এমন কিছু উল্লেখ করা হলো,
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বনু তামীম গোত্রের জুলখোয়াইসিরাহ্ নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ইনসাফ করুন। তিনি বললেন তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হব যদি আমি ইনসাফ না করি। উমর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বললেন, একে ছেড়ে দাও। তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী রয়েছে তোমাদের কেউ তাদের নামাজের তুলনায় নিজের নামাজ এবং রোজা নগণ্য বলে মনে করবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করে না। তারা দ্বীন হতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে কিন্তু কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। মাঝের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্তগোশত পার হয়ে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হলো এমন একজন কাল মানুষ যার একটি বাহু নারীর স্তনের মত অথবা গোশত খণ্ডের মত নড়াচড়া করবে। তারা লোকদের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করবে।
আবু সাঈদ (রা.) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট হতে এ কথা শুনেছি। আমি এ-ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) এদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। তখন আলী (রা.) ঐ লোককে খুঁজে বের করতে আদেশ দিলেন। খোঁজ করে যখন আনা হলো আমি মনোযোগের সঙ্গে তাকিয়ে তার মধ্যে ঐ সব চিহ্নগুলি দেখতে পেলাম, যা রাসূল (সা.) বলেছিলেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬১০]
অন্য হাদিসে এসেছে,
‘আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আলী (রা.) ইয়ামানে অবস্থানকালে রাসূল (সা.)-এর কাছে কিছু মাটি মেশানো সোনা পাঠিয়েছিলেন। রাসূল (সা.) বনু মুজাশি গোত্রের আকরা ইবনে হাবিস হানযালী, উয়াইনাহ ইবনে হিসন ইবনে বাদ্র ফাযারী, আলক্বামাহ ইবনে উলাছা আমিরী ও বনু কিলাবের একজন এবং বনু নাবহান গোত্রের যায়দ আল খায়ল তাঈর মধ্যে তা ভাগ করে দেন। এ কারণে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, রাসূল (সা.) নাজদবাসী সরদারদেরকে দিচ্ছেন। আর আমাদেরকে বঞ্চিত করছেন। এ প্রেক্ষিতে রাসূল (সা.) বললেন: আমি তাদের অন্তর জয়ের চেষ্টা করছি। তখন কোটরাগত চোখ, উচ্চ কপাল, বেশি দাড়ি, উচ্চ চোয়াল ও মুণ্ডানো মাথা ওয়ালা এক লোক সামনে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর। রাসূল (সা.) বললেন: আমিই যদি তাঁর নাফরমানী করি, তবে তাঁর অনুগত হবে আর কে? আর এজন্যই তিনি আমাকে পৃথিবীর লোকের উপর আমানতদার নির্দিষ্ট করেছেন। অথচ তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। এমন সময় দলের মধ্য থেকে একটা লোক, সম্ভবত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.), ঐ লোকটিকে হত্যা করার জন্য রাসূল (সা.)-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে নিষেধ করলেন। সে লোকটি চলে যাওয়ার পর রাসূল (সা.) বললেন: এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে, যারা কুরআন পড়বে, তবে কুরআন তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করবে। যদি আমি তাদেরকে পাই, তাহলে আদ জাতিকে হত্যা করার মত তাদেরকে হত্যা করব।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৪৩২]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/4536/article-details.html