প্রশ্ন
বিচারকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? দলিলসহ জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম বিচার করার ক্ষেত্রে বিচারকের জন্য কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
১। ক্রোধান্বিত অবস্থায় বিচার করতে পারবে না।
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আবদুর রহমান ইবনে আবু বাকরাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আবু বাকরাহ (রা.) তাঁর ছেলেকে লিখে পাঠালেন- সে সময় তিনি সিজিস্তানে অবস্থান করছিলেন- যে তুমি ক্রুদ্ধ অবস্থায় বিবাদমান দু’লোকের মাঝে ফায়সালা করো না। কেননা, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বিচারক রাগের হালতে দু’জনের মধ্যে বিচার করবে না।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১৫৮; সহিহ মুসলিম হাদিস: ৪৩৮২; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫৮৯; সুনানে তিরমিযি হাদিস: ১৩৩৪]
২। বাদী-বিবাদী উভয়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
হাদিসে এসেছে,
‘আলী (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমাকে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমার নিকট যখন দুইজন লোক বিচারের জন্য আবেদন করে তখন দ্বিতীয় পক্ষের বক্তব্য তুমি সম্পূর্ণভাবে না শুনেই প্রথম পক্ষের কথার উপর নির্ভর করে রায় প্রদান করো না। তুমি খুব শীঘ্রই জানতে পারবে, তুমি কিভাবে ফায়সালা করছ। আলী (রা.) বলেন, তারপর আমি বিচারক হিসাবেই রয়ে গেছি।’ [সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১৩৩১]
৩। বাদী-বিবাদী উভয়ের প্রতি সমান আচরণ করতে হবে।
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (সা.) -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, নিশ্চয়ই মানুষ এমন শত উটের মতো, যাদের মধ্য থেকে তুমি একটিকেও বাহনের উপযোগী পাবে না।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৯৮]
এর অর্থ হলো, সকলের মর্যাদা বরাবর হবে। মানুষে মানুষে কোনো ব্যবধান থাকবে না।
৪। কারো প্রতি বিদ্বেষ রেখে বিচার করতে পারবে না।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন,
‘কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৮]
৫। বিচারের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ থেকে ঘুষ গ্রহণ করতে পারবে না।
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে ঘুষখোর ও ঘুষ প্রদানকারীকে রাসূল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন।’ [সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১৩৩৬]
৬। বিচারকের পদ চেয়ে না নেওয়া। হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আবদুর রহমান ইবনে সামুরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বললেন, হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কারণ, চাওয়ার পর যদি নেতৃত্ব পাও তবে এর দিকে তোমাকে সোপর্দ করে দেয়া হবে। আর যদি না চেয়ে তা পাও তবে তোমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করা হবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৬২২]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/4421/article-details.html