প্রশ্ন
ইসলামে হুকমি শহিদ দ্বারা কারা উদ্দেশ্য? এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আল্লাহর পথে জিহাদ করে যারা শহিদ হয় তারাই প্রকৃত শহিদ। তবে একদল লোক প্রকৃত শহিদ না হয়েও রাসূল (সা.) এর ঘোষণা অনুযায়ী আখেরাতে শহিদের মর্যাদা লাভ করবে। এরাই হলো হুকমি শহিদ। বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন শ্রেণির লোকদের হুকমি শহিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা বলা আছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
১. কাফের, বিদ্রোহী ও ডাকাতদের উদ্দেশ্যে করা আক্রমণে নিজেই নিহত হলে।
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى خَيْبَرَ…. كَانَ سَيْفُ عَامِرٍ قَصِيْرًا فَتَنَاوَلَ بِهِ سَاقَ يَهُوْدِيٍّ لِيَضْرِبَهُ وَيَرْجِعُ ذُبَابُ سَيْفِهِ فَأَصَابَ عَيْنَ رُكْبَةِ عَامِرٍ فَمَاتَ مِنْهُ قَالَ فَلَمَّا قَفَلُوْا قَالَ سَلَمَةُ رَآنِيْ رَسُوْلُ اللهِ وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِيْ قَالَ مَا لَكَ قُلْتُ لَهُ فَدَاكَ أَبِيْ وَأُمِّيْ زَعَمُوْا أَنَّ عَامِرًا حَبِطَ عَمَلُهُ قَالَ النَّبِيُّ كَذَبَ مَنْ قَالَهُ إِنَّ لَهُ لَأَجْرَيْنِ
‘সালামাহ ইবনু আকওয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে খাইবার অভিযানে বেরোলাম… আমির ইবনুল আকওয়া (রা.)-এর তলোয়ারটা ছিল ছোট, তা দিয়ে তিনি জনৈক ইয়াহূদির পায়ের গোছায় আঘাত করলে তরবারির তীক্ষ্ণ ভাগ ঘুরে এসে তাঁর নিজের হাঁটুতে লেগে যায়। এতে তিনি মারা যান। সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন, তারপর লোকেরা খাইবার থেকে ফিরতে শুরু করলে রাসূল (সা.) আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললেন, কী খবর? আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। লোকজন ধারণা করছে, (নিজ আঘাতে মারা যাওয়ায়) আমির (রা.)-এর আমাল নষ্ট হয়ে গেছে। রাসূল (সা.) বললেন, এ কথা যে বলেছে সে মিথ্যা বলেছে। বরং আমিরের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব।’[সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪১৯৬]
২. কোনো কিছুতে চাপা পড়ে কেউ মারা গেলে।
قَالَ الشُّهَدَاءُ خَمْسَةٌ الْمَطْعُونُ وَالْمَبْطُونُ وَالْغَرِيقُ وَصَاحِبُ الْهَدْمِ وَالشَّهِيدُ فِي سَبِيلِ اللهِ وَقَالَ لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا لَاسْتَهَمُوا عَلَيْهِ
‘রাসূল (সা.) বললেন, শহীদ পাঁচ প্রকার- ১. প্লেগে মৃত ব্যক্তি ২. কলেরায় মৃত ব্যক্তি ৩. পানিতে নিমজ্জিত ব্যক্তি ৪. চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং ৫. আল্লাহর পথে (জিহাদে) শহীদ।’[সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৩]
৩. মহামারীতে কেউ মারা গেলে।
৪. ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণ করলে।
৫. পানিতে ডুবে বা আগুনে পুড়ে মারা গেলে।
৬. গর্ভবতী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَابِرِ بْنِ عَتِيكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّهُ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُهُ فَقَالَ قَائِلٌ مِنْ أَهْلِهِ إِنْ كُنَّا لَنَرْجُو أَنْ تَكُونَ وَفَاتُهُ قَتْلَ شَهَادَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لَقَلِيلٌ الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ شَهَادَةٌ وَالْمَطْعُونُ شَهَادَةٌ وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهَادَةٌ – يَعْنِي الْحَامِلَ – وَالْغَرِقُ وَالْحَرِقُ وَالْمَجْنُوبُ – يَعْنِي ذَاتَ الْجَنْبِ – شَهَادَةٌ
‘জাবির ইবনে আতীক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে আসেন। জাবির (রা.) -এর পরিবারের কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে, সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসূল (সা.) বলেন, তাহলে আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারীতে নিহত হলে শহীদ, যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৮০৩]
এছাড়াও হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে আরো কয়েক শ্রেণির হুকমি শহিদের কথা বলা হয়েছে। যেমন,
৭. নির্যাতনের ভয়ে আত্মগোপনকারী সে অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করলে।
৮. নিজের জান-মাল রক্ষার লড়াইয়ে নিহত হলে।
৯. নিজ পরিবার রক্ষায় বা জালেমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিহত হলে।
১০. শাহাদাতের কামনা করে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলে।
১১. ইসলামি রাষ্ট্রের সীমানা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলে।
১২. নিউমোনিয়ার কারণে মারা গেলে।
১৩. ইলমে দ্বীন অর্জনে রত ব্যক্তি মারা গেলে।
[সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯১৩, ১৯০৯; মুসনাদে আহমদ, ১/১৮৭ ও ১/৯০; উমদাতুল ক্বারী, ১০/১৪৫]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/4123/article-details.html