প্রশ্ন
আমার স্ত্রীর ছোট ভাইকে বছর দুয়েক আগে একটি মেয়ের সাথে বিবাহ সম্পন্ন করানো হয়। আমার শাশুড়ি একজন দ্বীনদার মহিলা। এজন্য তিনি উক্ত পাত্রীকে পুত্রবধূ হিসেবে নির্বাচন করেন, এই ভেবে যে, সে দ্বীনদার এবং আমলী হবে। নম্র ও ভদ্র হবে। বর্তমানে, শ্বশুর-শাশুড়ি নিজেদের বাসায় পুত্রবধূকে রেখেছেন। তার যাবতীয় ভরণপোষণ ও পুত্রের ভরণপোষণের সিংহভাগ তারাই দিচ্ছেন। কিন্তু উক্ত পুত্রবধূ তার শাশুড়ির সাথে ছোটখাটো বিষয়েও তর্ক ও বেয়াদবিতে লিপ্ত হচ্ছে। বিভিন্ন আমল যেমন কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, কিতাব পড়া ইত্যাদি ব্যাপারে তারা উৎসাহ দিলে উক্ত পুত্রবধূ বিরক্তি প্রকাশ করে এবং উদাসীনতা প্রদর্শন করে। ছোট ভাই মাঝে মাঝে তার স্ত্রীকে এসব বিষয়ে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। শ্বশুরের বাসায় উক্ত পুত্রবধূর আচরণ নিয়ে সবাই পেরেশান। এমতাবস্থায় জানার বিষয় হলো, উক্ত পুত্রবধূকে আলাদা সংসার বুঝিয়ে না দিয়ে নিজেদের সাথে রাখাটা কি শরিয়তসম্মত হচ্ছে? উক্ত পুত্রবধূর সংশোধনের জন্য পুত্র ও শ্বশুর-শাশুড়ির দায়িত্ব কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
উল্লিখিত বক্তব্য দ্বারা যতটুকু বোঝা যায়, পুত্রবধূ তার শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে মিলেমিশে থাকতে প্রস্তুত নয় বা তার সে যোগ্যতা নেই। কাজেই এই পরিস্থিতিতে পৃথকভাবে থাকতে চাইলে তাকে আলাদা করে দেওয়াই সর্বোত্তম কাজ হবে। এ পরিস্থিতিতে আলাদা সংসার না বুঝিয়ে নিজেদের সাথে থাকতে বাধ্য করা শরিয়তে কাম্য নয়।
আলাদা করে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, শ্বশুর-শাশুড়ি থেকে একেবারে পৃথক হয়ে যাবে বরং আলাদা থেকেও শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা যায়। অতএব পুত্রবধুর উচিত সাধ্যমতো তাদের সেবা যত্নের প্রতি খেয়াল রাখা এবং তারা কিভাবে তার প্রতি খুশি হয় সেই ফিকির রাখা। এর দ্বারা সে উভয় জাহানে সফলকাম হবে। আর যে আচরণের দরুন তারা পেরেশান হয়েছে তার জন্য তওবা ইস্তেগফার করা ও তাদের কাছে মাফ চাওয়া।
পুত্রবধূর সংশোধনের ক্ষেত্রে শ্বশুর-শাশুড়ির চেয়ে পুত্রের সংশোধনী বেশি কার্যকরী হবে। সুতরাং ছেলের দায়িত্ব হলো, স্ত্রী স্বামীর শরিয়তসম্মত বিষয়ে আনুগত্য করতে না চাইলে স্বামী পর্যায়ক্রমে তার সংশোধনের চেষ্টা করবে। প্রথমে তাকে আল্লাহর ভয় দেখাবে এবং আনুগত্যের লাভ ও অবাধ্যতার ক্ষতি সম্পর্কে তাকে মুহাব্বতের সাথে বোঝাবে। তাতে কাজ না হলে তার বিছানা আলাদা করে দিবে। সর্বাবস্থায় উদ্দেশ্যে থাকবে তাকে সংশোধন করা। সুতরাং সংশোধনের জন্য যে পন্থা বেশি ফলপ্রসূ মনে হয় সেটাই অবলম্বন করা উচিত।
রদ্দুল মুহতার ৩/২০৮, ফাতাওয়া ওলামায়ে বালাদিল হারাম, পৃ. ১৩৯১ কিতাবুন নাওয়াজিল ১৫/১৪৫, ১৬২
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/3894/article-details.html