প্রশ্ন
কেয়ামতের পূর্বে যে দাজ্জাল আসবে, তার কী ধরনের ক্ষমতা থাকবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল বের হওয়ার কেয়ামতের একটি বড় আলামত। দাজ্জালের বের হওয়া এ কথা প্রমাণ করবে যে, কেয়ামত অতিনিকটে। হাদিস শরিফে দাজ্জালের বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা.) বলেছেন:
‘এমন কোনো নবী প্রেরিত হননি যিনি তার উম্মাতকে এই কানা মিথ্যাবাদী সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফির كَافِرٌ শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে।’ [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৩৯৩]
অন্য হাদিসে এসেছে,
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ عَبْدِ الصَّمَدِ بْنِ عَبْدِ الْوَارِثِ وَحَجَّاجُ بْنُ الشَّاعِرِ كِلاَهُمَا عَنْ عَبْدِ الصَّمَدِ – وَاللَّفْظُ لِعَبْدِ الْوَارِثِ بْنِ عَبْدِ الصَّمَدِ – حَدَّثَنَا أَبِى عَنْ جَدِّى عَنِ الْحُسَيْنِ بْنِ ذَكْوَانَ حَدَّثَنَا ابْنُ بُرَيْدَةَ حَدَّثَنِى عَامِرُ بْنُ شَرَاحِيلَ الشَّعْبِىُّ شَعْبُ هَمْدَانَ أَنَّهُ سَأَلَ فَاطِمَةَ بِنْتَ قَيْسٍ أُخْتَ الضَّحَّاكِ بْنِ قَيْسٍ وَكَانَتْ مِنَ الْمُهَاجِرَاتِ الأُوَلِ فَقَالَ حَدِّثِينِى حَدِيثًا سَمِعْتِيهِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لاَ تُسْنِدِيهِ إِلَى أَحَدٍ غَيْرِهِ فَقَالَتْ لَئِنْ شِئْتَ لأَفْعَلَنَّ فَقَالَ لَهَا أَجَلْ حَدِّثِينِى. فَقَالَتْ ….:فَلَمَّا انْقَضَتْ عِدَّتِى سَمِعْتُ نِدَاءَ الْمُنَادِى مُنَادِى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يُنَادِى الصَّلاَةَ جَامِعَةً. فَخَرَجْتُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَصَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَكُنْتُ فِى صَفِّ النِّسَاءِ الَّتِى تَلِى ظُهُورَ الْقَوْمِ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- صَلاَتَهُ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ « لِيَلْزَمْ كُلُّ إِنْسَانٍ مُصَلاَّهُ ». ثُمَّ قَالَ « أَتَدْرُونَ لِمَ جَمَعْتُكُمْ ». قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ
قَالَ « إِنِّى وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُكُمْ لِرَغْبَةٍ وَلاَ لِرَهْبَةٍ وَلَكِنْ جَمَعْتُكُمْ لأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِىَّ كَانَ رَجُلاً نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ وَحَدَّثَنِى حَدِيثًا وَافَقَ الَّذِى كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْ مَسِيحِ الدَّجَّالِ حَدَّثَنِى أَنَّهُ رَكِبَ فِى سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ مَعَ ثَلاَثِينَ رَجُلاً مِنْ لَخْمٍ وَجُذَامَ فَلَعِبَ بِهِمُ الْمَوْجُ شَهْرًا فِى الْبَحْرِ ثُمَّ أَرْفَئُوا إِلَى جَزِيرَةٍ فِى الْبَحْرِ حَتَّى مَغْرِبِ الشَّمْسِ فَجَلَسُوا فِى أَقْرُبِ السَّفِينَةِ فَدَخَلُوا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْهُمْ دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يَدْرُونَ مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقَالُوا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ. قَالُوا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتْ أَيُّهَا الْقَوْمُ انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِى الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ. قَالَ لَمَّا سَمَّتْ لَنَا رَجُلاً فَرِقْنَا مِنْهَا أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً – قَالَ – فَانْطَلَقْنَا سِرَاعًا حَتَّى دَخَلْنَا الدَّيْرَ فَإِذَا فِيهِ أَعْظَمُ إِنْسَانٍ رَأَيْنَاهُ قَطُّ خَلْقًا وَأَشَدُّهُ وِثَاقًا مَجْمُوعَةٌ يَدَاهُ إِلَى عُنُقِهِ مَا بَيْنَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى كَعْبَيْهِ بِالْحَدِيدِ قُلْنَا وَيْلَكَ مَا أَنْتَ قَالَ قَدْ قَدَرْتُمْ عَلَى خَبَرِى فَأَخْبِرُونِى مَا أَنْتُمْ قَالُوا نَحْنُ أُنَاسٌ مِنَ الْعَرَبِ رَكِبْنَا فِى سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ فَصَادَفْنَا الْبَحْرَ حِينَ اغْتَلَمَ فَلَعِبَ بِنَا الْمَوْجُ شَهْرًا ثُمَّ أَرْفَأْنَا إِلَى جَزِيرَتِكَ هَذِهِ فَجَلَسْنَا فِى أَقْرُبِهَا فَدَخَلْنَا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْنَا دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يُدْرَى مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقُلْنَا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ
قُلْنَا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتِ اعْمِدُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِى الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ فَأَقْبَلْنَا إِلَيْكَ سِرَاعًا وَفَزِعْنَا مِنْهَا وَلَمْ نَأْمَنْ أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً فَقَالَ أَخْبِرُونِى عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ أَسْأَلُكُمْ عَنْ نَخْلِهَا هَلْ يُثْمِرُ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ. قَالَ أَمَا إِنَّهُ يُوشِكُ أَنْ لاَ تُثْمِرَ قَالَ أَخْبِرُونِى عَنْ بُحَيْرَةِ الطَّبَرِيَّةِ. قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِيهَا مَاءٌ قَالُوا هِىَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ. قَالَ أَمَا إِنَّ مَاءَهَا يُوشِكُ أَنْ يَذْهَبَ. قَالَ أَخْبِرُونِى عَنْ عَيْنِ زُغَرَ. قَالُوا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِى الْعَيْنِ مَاءٌ وَهَلْ يَزْرَعُ أَهْلُهَا بِمَاءِ الْعَيْنِ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ هِىَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ وَأَهْلُهَا يَزْرَعُونَ مِنْ مَائِهَا. قَالَ أَخْبِرُونِى عَنْ نَبِىِّ الأُمِّيِّينَ مَا فَعَلَ قَالُوا قَدْ خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَنَزَلَ يَثْرِبَ. قَالَ أَقَاتَلَهُ الْعَرَبُ قُلْنَا نَعَمْ. قَالَ كَيْفَ صَنَعَ بِهِمْ فَأَخْبَرْنَاهُ أَنَّهُ قَدْ ظَهَرَ عَلَى مَنْ يَلِيهِ مِنَ الْعَرَبِ وَأَطَاعُوهُ قَالَ لَهُمْ قَدْ كَانَ ذَلِكَ قُلْنَا نَعَمْ. قَالَ أَمَا إِنَّ ذَاكَ خَيْرٌ لَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ وَإِنِّى مُخْبِرُكُمْ عَنِّى إِنِّى أَنَا الْمَسِيحُ وَإِنِّى أُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِى فِى الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِى الأَرْضِ فَلاَ أَدَعَ قَرْيَةً إِلاَّ هَبَطْتُهَا فِى أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ فَهُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَىَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا اسْتَقْبَلَنِى مَلَكٌ بِيَدِهِ السَّيْفُ صَلْتًا يَصُدُّنِى عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلاَئِكَةً يَحْرُسُونَهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَطَعَنَ بِمِخْصَرَتِهِ فِى الْمِنْبَرِ « هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ ». يَعْنِى الْمَدِينَةَ « أَلاَ هَلْ كُنْتُ حَدَّثْتُكُمْ ذَلِكَ ». فَقَالَ النَّاسُ نَعَمْ « فَإِنَّهُ أَعْجَبَنِى حَدِيثُ تَمِيمٍ أَنَّهُ وَافَقَ الَّذِى كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْهُ وَعَنِ الْمَدِينَةِ وَمَكَّةَ أَلاَ إِنَّهُ فِى بَحْرِ الشَّامِ أَوْ بَحْرِ الْيَمَنِ لاَ بَلْ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ ما هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ ». وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمَشْرِقِ. قَالَتْ فَحَفِظْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم
হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (সা.)-এর এক আহ্বানকারীকে ঘোষণা করতে শুনলাম, নামাযের সময় হয়ে গেছে। ফলে আমি মসজিদে গিয়ে রাসূল (সা.)-এর সাথে জামাতে নামায আদায় করলাম। আমি পুরুষদের পেছনে নারীদের একটি কাতারের মাঝে ছিলাম। নামায শেষে রাসূল (সা.) মুচকি হেসে মিম্বারে আরোহণ করলেন। এরপর বললেন, তোমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানেই বসে থাকো। এরপর বললেন, তোমরা কি জানো আমি তোমাদেরকে কি কারণে বসতে বলেছি? সাহাবায়ে কেরাম রা. বললেন, এ ব্যাপারে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে উৎসাহ বা ভয় দেখানোর জন্য বসতে বলিনি। বরং এ (কথা শোনানোর) জন্য বসতে বলেছি যে, তামিম দারী একজন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ছিলো। সে আমার কাছে এসে ইসলামের উপর বাইয়াত গ্রহণ করেছে। সে আমার কাছে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছে, যা তোমাদের কাছে বর্ণিত দাজ্জালের ঘটনার সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। সে বলেছে, বনু লাখম এবং বনু জুযাম গোত্রদ্বয়ের কিছু লোককে সাথে নিয়ে আমি একদা সমুদ্রভ্রমণে বের হই। একসময় ঝড়ের কবলে পড়ে দিকভ্রান্ত হয়ে গেলে এক মাস পর্যন্ত সমুদ্রের ঢেউ আমাদের নিয়ে খেলা করতে থাকে। পরিশেষে ঢেউ পশ্চিম দিকের একটি দ্বীপে আমাদেরকে নিয়ে পৌঁছায়। অতঃপর আমরা ছোট ছোট নৌকায় চড়ে দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে সেখানে একধরনের বিশেষ প্রাণীর সন্ধান পাই। প্রাণীটি স্থূল ও ঘনচুলবিশিষ্ট ছিলো। দেহের চুল অধিক হওয়ায় তার অগ্র-পশ্চাৎ নির্ণয় করা যাচ্ছিল না। আমরা প্রাণীটিকে দেখে বললাম, তোর ধ্বংস হোক! তুই কে? প্রাণীটি বললো, আমি হলাম জাসসাসাহ (শাব্দিক অর্থ গোয়েন্দা বা গোপনে সংবাদ সংগ্রহকারী)। আমরা বললাম, সেটা আবার কী? সে বললো, তোমরা (প্রথমে) গির্জার ভিতরে থাকা ওই লোকটার নিকটে যাও। কারণ সে তোমাদের সংবাদের ব্যাপারে গভীর প্রতীক্ষায় আছে। যখন সে আমাদের সাথে কথা বলছিল তখন আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, না জানি এটা শয়তান কিনা!! ফলে দ্রুত প্রাণীটির কাছ থেকে সরে পড়ি এবং গির্জার ভিতরে প্রবেশ করি। গির্জার ভিতরে আমরা দীর্ঘকায় এক মহামানবকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেলাম। এমন ভয়ঙ্কর মানুষ আমরা ইতিপূর্বে প্রত্যক্ষ করিনি। তার দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত এবং দুই পা গোছা পর্যন্ত শক্ত শিকলে বাঁধা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ধ্বংস হোক তোর! কে তুই? সে বললো, তোমরা তো আমাকে পেয়েই গেছো এবং আমার অবস্থা ও অবস্থানও দেখে ফেলেছো। সুতরাং তোমরা বলো, তোমরা কারা? উত্তরে আমরা বললাম, আমরা আরবী সম্প্রদায়। অতঃপর সে তাদের পুরো ঘটনার ফিরিস্তি তার সামনে তুলে ধরলো। শিকলে বাঁধা লোকটা জিজ্ঞেস করলো, বাইসান (Baysan) এর খেজুর বৃক্ষগুলোতে কি এখনো ফল আসে? আমরা বললাম, হ্যাঁ, আসে। সে বললো, অচিরেই এমন একটি সময় আসবে যখন ওই বৃক্ষগুলোতে কোনো ফল আসবে না। অতঃপর জিজ্ঞেস করলো, বুহাইরা তাবারিয়াতে (টাইবেরিয়া লেক) এখনো পানির মজুদ আছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ আছে। সেখানে প্রচুর পরিমাণ পানি রয়েছে। সে বললো, অচিরেই এর পানি শুকিয়ে যাবে। অতঃপর সে জিজ্ঞেস করলো, যুগার এর ঝর্ণাধারার কি অবস্থা? ঝর্ণা থেকে কি পানি প্রবাহিত হয়? স্থানীয় লোকজন কি সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে চাষাবাদ করে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর সে বললো, উম্মী (অক্ষরজ্ঞানহীন) সম্প্রদায়ের নবীর ব্যাপারে আমাকে বলো। সে কী কী করছে? আমরা বললাম, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে গেছেন। সে জিজ্ঞেস করলো, আরব সম্প্রদায় কি তার সাথে যুদ্ধ করেনি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, যুদ্ধ করেছে। এরপর জিজ্ঞেস করলো, সে আরবদের সাথে কীরূপ আচরণ করেছে? আমরা তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম যে, আরবের সকল মানুষের উপর তিনি বিজয়ী হয়েছেন। অধিকাংশ আরব তাকে মেনে নিয়েছে। সে বললো, আরবদের জন্য তাকে অনুসরণ করাই শ্রেয় হবে। এখন আমি তোমাদের কাছে আমার স্বীয় পরিচয় তুলে ধরছি, শোনো! আমি হলাম মাসীহে দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি আত্মপ্রকাশ করবো। বিশ্বজুড়ে বিচরণ করবো। পৃথিবীর এমন কোনো শহর নগর থাকবে না যেখানে আমি প্রবেশ করবো না। চল্লিশ রজনি আমি এভাবে বিশ্বব্যাপী ঘুরে বেড়াবো। তবে আরবের মক্কা ও তাইবা (মদীনা) শহরে আমি প্রবেশ করতে পারবো না। যখনই শহরদ্বয়ের কোনো একটি দিয়ে প্রবেশ করতে ইচ্ছা করবো তখন উন্মুক্ত তরবারী হাতে একজন ফেরেশতা আমার গতিরোধ করবে। কারণ শহরদ্বয়ের প্রতিটি সড়ক পথ তখন ফেরেশতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ঘটনাটি শোনার পর রাসূল (সা.) স্বীয় লাঠি দ্বারা মিম্বরে আঘাত করে বললেন, এটিই হচ্ছে তাইবা শহর! এটিই হচ্ছে তাইবা শহর! আমি কি তোমাদের কাছে পরিপূর্ণরূপে ঘটনা বর্ণনা করতে পেরেছি? সবাই বললো, হ্যাঁ। রাসূল (সা.) বললেন, সাবধানে থেকো! দাজ্জাল বর্তমানে সিরিয়ার সমুদ্রে অথবা ইয়েমেনের সমুদ্রে অবস্থান করছে! না!! বরং পূর্বদিকে অবস্থান করছে! পূর্বদিকে অবস্থান করছে! পূর্বদিকে অবস্থান করছে! [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৫৭৩)
আরেকটি হাদিসে নবী (সা.) বলেন:
‘দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দুটি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে।’ [সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ফিতান]
অপর হাদিসে রয়েছে,
‘দাজ্জাল বের হয়ে মদ্বীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদ্বীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদ্বীনার নিকটবর্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণ করবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মু’মিন। দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল (সা.) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবে: না। অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবে: আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো। দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।’ [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান]
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবে; হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী (সা.) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। অতঃপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবে: একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে-পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবেনা? নবী (সা.) বলেন, উক্ত যুবক বলবেন: তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে। অতঃপর বলবেঃ উঠে দাড়াও। তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবে এখনও ঈমান আনবে না? তিনি বলবেন: তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর তিনি বলবেন: হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবে না। অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নবী (সা.) বলেন. ‘এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী।’ [সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/3497/article-details.html