প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম। আমি একজন নওমুসলিম। কিছু দিন পূর্বে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি তো ইতিপূর্বে অনেক মারাত্মক ধরনের গুনাহ করেছি। আল্লাহ যদি আখেরাতে আমাকে এর জন্য পাকড়াও করেন তাহলে তো আমার বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। এ থেকে বাঁচার জন্য আমি কী করতে পারি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আমরা জেনে অত্যন্ত খুশী হয়েছি যে, আপনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ আপনার ইসলাম কবুল করুন।
প্রিয় ভাই, ইসলাম গ্রহণ করা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। ইসলাম এত সৌভাগ্যের বিষয় যে, তা পূর্বের সমস্ত গুনাহকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আপনি শুনে আশ্চর্য হবেন যে, আপনার মতোই এক সাহাবী রাসূল (সা.)-কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তখন রাসূল (সা.) তাকে কী উত্তর দিয়েছেন তা আমরা হাদিস শরিফের মধ্যে দেখে নেই।
হাদিস শরিফে এসেছে
ইবনে শিমাসাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমর ইবনে আস (রা.)-এর মরণোন্মুখ সময়ে আমরা তাঁর নিকটে উপস্থিত হলাম। তিনি অনেকক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকলেন এবং দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরূপ অবস্থা দেখে তাঁর এক ছেলে বলল, ‘আব্বাজান! আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ (সা.) অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি? আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ (সা.) অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি?’ এ কথা শুনে তিনি তাঁর চেহারা সামনের দিকে করে বললেন, আমাদের সর্বোত্তম পুঁজি হল, এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। আমি তিনটি স্তর অতিক্রম করেছি। (এক) আমার চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি বড় বিদ্বেষী আর কেউ ছিল না। তাঁকে হত্যা করার ক্ষমতা অর্জন করাই ছিল আমার তৎকালীন সর্বাধিক প্রিয় বাসনা। যদি (দুর্ভাগ্যক্রমে) তখন মারা যেতাম, তাহলে নিঃসন্দেহে আমি জাহান্নামী হতাম।
(দুই) তারপর যখন আল্লাহ তাআলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রক্ষিপ্ত করলেন, তখন নবী (সা.)-এর নিকট হাযির হয়ে নিবেদন করলাম, ‘আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার হাতে বায়আত করতে চাই।’ তিনি তখন ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তিনি বললেন, ‘আমর! কী ব্যাপার?’ আমি নিবেদন করলাম, ‘একটি শর্ত আরোপ করতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘শর্তটি কী?’ আমি বললাম, ‘আমাকে ক্ষমা করা হোক—শুধু এতটুকুই।’ তিনি বললেন, ‘তুমি কি জানো না যে, ইসলাম পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়, হিজরত পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে এবং হজও পূর্বের পাপসমূহ ধ্বংস করে দেয়?’
তখন থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা অধিক প্রিয় মানুষ আর কেউ নেই। আর আমার দৃষ্টিতে তাঁর চেয়ে সম্মানী ব্যক্তি আর কেউ নেই। তাঁকে সম্মান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার অবস্থা এরূপ ছিল যে, তাঁর দিকে নয়নভরে তাকাতে পারতাম না। যার ফলে আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, ‘আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর গঠনাকৃতি কিরূপ ছিল?’ তাহলে আমি তা বলতে পারব না। এ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আশা ছিল যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
(তিন) তারপর বহু দায়িত্বপূর্ণ বিষয়াদির খপ্পরে পড়লাম। জানি না, তাতে আমার অবস্থা কী? সুতরাং আমি মারা গেলে কোন মাতমকারিণী অথবা আগুন যেন অবশ্যই আমার (জানাযার) সাথে না থাকে। তারপর যখন আমাকে দাফন করবে, তখন যেন তোমরা আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি দেবে। অতঃপর একটি উট যবেহ করে তার গোশত বণ্টন করার সময় পরিমাণ আমার কবরের পাশে অপেক্ষা করবে। যাতে আমি তোমাদের সাহায্যে নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারি এবং আমার প্রভুর প্রেরিত ফিরিশতাদের সঙ্গে কিরূপ বাক-বিনিময় করি, তা দেখে নেই। [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১২১]
সুতরাং এ বিষয়ে আপনি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আল্লাহ আপনাকে ইসলামের উপর অবিচল রাখুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/3442/article-details.html