প্রশ্ন
আমাদের ওয়ালটনের শো-রুম আছে। আমরা বিভিন্ন মেয়াদে কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করি। কিস্তির মেয়াদের হিসাবে পণ্যের দাম বিভিন্ন রকম হয়। যেমন: কেউ ৩ মাসের কিস্তিতে ফ্রিজ কিনলে মূল্য ৩০০০০ টাকা। আবার ঐ পণ্যটিই ১২ মাসের কিস্তিতে কিনলে এর দাম ৩২,৫০০ টাকা। আরেকটি নিয়ম হল, কেউ পণ্য কেনার সময় ৬ মাসের কিস্তির চুক্তি করার পর মাঝে যদি কোনো কিস্তি ফেল করে, তাহলে আমরা তাকে ডেকে বাধ্য করি, যাতে সে এরচে’ বেশি সময়ের কিস্তি গ্রহণ করে। তখন সে বাধ্য হয়েই ১২ মাসের কিস্তি গ্রহণ করে, ফলে সে ৩০,০০০ টাকার স্থলে ৩২৫০০ টাকা পরিশোধ করে। অতীতে ২-৩ জনের সাথে এমনটি হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন আগে এক হুযুর বললেন, উক্ত পদ্ধতি নাজায়েয। এখন মাননীয় মুফতী সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন হল:
১. এভাবে কিস্তির মেয়াদের কম-বেশির ভিত্তিতে একটি পণ্য ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করা বৈধ কি না?
২. উল্লেখিত কিস্তি ফেইলের ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তবায়িত পদ্ধতিটি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?
৩. যদি বৈধ না হয়, তাহলে উক্ত পদ্ধতিতে আমরা যেই দুই-তিনজন থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছি, তার কী হুকুম? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
১. কিস্তির মেয়াদ কম বেশি হওয়ার কারণে পণ্যের মূল্য কম বেশি করা জায়েয। তবে শর্ত হল, কেনা বেচার সময় মেয়াদ অনুযায়ী একটা মূল্য চূড়ান্ত করে দিতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহক যদি পণ্যটি কিস্তিতে নেয় তবে তা কত মাসে পরিশোধ করবে এবং মোট কত টাকা পরিশোধ করবে তা চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার পর কোনো কিস্তি আদায়ে বিলম্ব হলেও মূল্য বাড়ানো যাবে না। অথাৎ পূর্ব নির্ধারিত মূল্য অপরিবর্তীত থাকবে। তাই গ্রাহকের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কিস্তি আদায় করে দেয়া। যেন বিলম্বের কারণে বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
২. ও ৩. কিস্তি যথা সময়ে আদায় না করলে আপনারা মূল্য বৃদ্ধির যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা শরীয়তসম্মত নয়। বরং তা সম্পূর্ণ সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত ও হারাম।
সুতরাং আপনাদের কর্তব্য হল, যাদের থেকে উক্ত পদ্ধতিতে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে সম্ভব হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া। আর যোগাযোগ করা সম্ভব না হলে সে টাকা তাদের পক্ষ থেকে গরীব-মিসকীনদের সদকা করে দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তাওবা-ইস্তিগফার করা।
-জামে তিরমিযী, হাদিস: ১২৩১; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৯
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=30098&preview=true