প্রশ্ন
ধান কাটার বা অন্যান্য ফসল তোলার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সাথে আমরা উক্ত ফসলেরই একটা অংশ দেওয়ার চুক্তি করি। অর্থাৎ কথা থাকে, তারা ক্ষেতের ধান বা ফসল তুলে বাড়িতে এনে দেবে। বিঘাপ্রতি তাদেরকে সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান বা ফসল দেওয়া হবে। তো ধান বা ফসল তোলা শেষ হলে তা বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে সেখান থেকে তাদের অংশ নিয়ে যায়। এক ভাই বললেন, এটা নাকি জায়েয নয়। কিন্তু আমি তার কথার কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। তাই আমি জানতে চাই, এ বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিতে সঠিক সিদ্ধান্ত কী?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
শ্রমিকেরা যে ফসল কেটে আনবে সেখান থেকেই তাদের বিনিময় পরিশোধ করার শর্তে চুক্তি করা সহিহ নয়। কেননা এতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মজুরি পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত বা অনির্ধারিত হয়ে পড়ে। যেমন, কোনো কারণে যদি ধান বা ফসল চিটা হয়ে যায় কিংবা শ্রমিকের আবহেলা ছাড়াই (যেমন : হঠাৎ প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি, আগুনে পুড়ে যাওয়া কিংবা ফসল নিয়ে আসার পথে কোনো দুর্ঘটনায়) ফসল নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তাদের কাটা ফসল নেই বিধায় মালিক তাদের মজুরি দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। অথচ এসব ক্ষেত্রেও শ্রমিক তার ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়ার হকদার। তাই ইসলামী শরীয়তে কর্তিত ফসল থেকেই বিনিময় নির্ধারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হল, ক্ষেত বা বিঘাপ্রতি তাদেরকে কী ধরনের এবং কী পরিমাণ ধান বা ফসল দেওয়া হবে তা নির্ধারিত করে নেওয়া। আর তা এই ফসল থেকেই দেওয়া হবে, তা নিশ্চিত না করা। এভাবে চুক্তির পর পারিশ্রমিক দেওয়ার সময় চুক্তিকৃত শর্তের সাথে মিলে গেলে তাদের কেটে আনা ফসল থেকেও মজুরি পরিশোধ করা যাবে। আবার চুক্তিকৃত পণ্য অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করেও দেওয়া যেতে পারে।
জেনে রাখা দরকার, শরীয়তের প্রতিটি বিধানেই মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। তাই আল্লাহ তাআলার এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি নির্দেশ কারণ খোঁজ করা ছাড়াই পূর্ণ আস্থার সাথে মেনে নেওয়াই মুমিনের কাজ।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১২৭; কিতাবুল আছল ৩/৪৩২, ৪৩৬; শরহুল মাজাল্লা ২/৫৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৭
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=29814&preview=true