প্রশ্ন
আমি একজন হাফেজ। আমি একটি মাদরাসায় হিফজ বিভাগে খেদমতে আছি। হিফজ বিভাগে ছাত্ররা প্রচুর দুষ্টুমি করে। এমন অনেক ছাত্র আছে, যাদেরকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হয় না। শেষে বাধ্য হয়ে শাসনের পথ অবলম্বন করতে হয়। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, ছাত্রদের অন্যায়ের কারণে তাদেরকে বেত দিয়ে শাস্তি দিতে কি কোনো সমস্যা আছে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
বাচ্চাদেরকে তরবিয়ত করার ক্ষেত্রে আদর ও শাসন উভয়টি জরুরী। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহাব্বত ও শফকত ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সামান্য আদরে তাদের জীবনের গতি পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই সবসময় তাদের প্রতি নম্রতার দিকটা প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَبِما رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ
আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তাহলে তারা আপনার আশপাশ হতে সরে পড়ত। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)
অনেক সময় ছাত্রের প্রতি শীথিলতা বা আদর তার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। তখন তার ভালোর জন্য তাকে শাসন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। শাসনের মাধ্যমে তরবিয়ত করাও হাদিস ও সাহাবাদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (সা.) আদেশ করেছেন,
مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين، واضربوهم عليها، وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع
অর্থ: যখন তোমাদের সন্তানরা সাত বছরে উপনীত হবে, তখন তাদেরকে নামায পড়ার আদেশ দিবে। তাদের বয়স যখন দশ বছর হবে, তখন নামায না পড়লে তাদেরকে মারপিট করো। আর তখন ছেলে মেয়েদের থেকে বিছানা আলাদা করে দাও। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)
এ হাদিসে স্পষ্ট ভাবে সন্তানকে প্রহার করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। কোনো বর্ণনায় ঘরে লাঠি ঝুলিয়ে রাখার কথাও পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেন,
ﻋﻠﻘﻮا اﻟﺴﻮﻁ ﺣﻴﺚ ﻳﺮاﻩ ﺃﻫﻞ اﻟﺒﻴﺖ؛ ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻬﻢ ﺃﺩﺏ
অর্থ: তোমরা লাঠি ঝুলিয়ে রাখো, যাতে ঘরের লোকেরা তা দেখতে পায়। কেননা তা তাদের তরবিয়তের পাথেয়।(আত তবরানী, বর্ণনা: ১০৬৭১)
সাহাবীদের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, ইবনে আব্বাস (রা.) তার ছাত্র ইকরামার পায়ে বেড়ি লাগিয়ে কুরআন সুন্নাহ শিক্ষা দিতেন। সুতরাং তরবিয়তের জন্য মাঝে মধ্যে শাসনের পথ অবলম্বন করাও কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=29558&preview=true