প্রশ্ন
সফর অবস্থায় নামায কসর করা কি জরুরি? কেউ কেউ বলে কসর করা জরুরি নয়। কেউ চাইলে পুরো নামাযও পড়তে পারে আবার কসরও করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এ কথার পর বিষয়টি নিয়ে আমি সংশয়ে পড়ে যাই। দয়া করে আমাকে এর সমাধান জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
মুসাফিরের জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায একাকী পড়লে বা মুসাফির ইমামের পেছনে আদায় করলে কসর করা জরুরি। এক্ষেত্রে পূর্ণ নামায পড়া ঠিক নয়। উক্ত কথা সঠিক নয়।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,
فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ.
নামায ফরয করা হয়েছে মুকিম অবস্থায় এবং সফরে দুই দুই রাকাত করে। অতপর সফর অবস্থায় নামায দুই রাকাতই বহাল রাখা হয়েছে আর মুকিম অবস্থার নামাযকে দুই রাকাত বৃদ্ধি করা হয়েছে।(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৫)
সহিহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
إِنِّي صَحِبْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي السَّفَرِ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، وَصَحِبْتُ عُمَرَ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، ثُمَّ صَحِبْتُ عُثْمَانَ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ وَقَدْ قَالَ اللهُ: لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.
আমি সফরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী হয়েছি। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের অধিক পড়েননি। এবং আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। উমর (রা.)-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। উসমান (রা.)-এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.
অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৯)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-কে সফরের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ، مَنْ خَالَفَ السُّنَّةَ كَفَرَ.
সফরের নামায দুই রাকাত। যে সুন্নাহকে পরিত্যাগ করল সে (এ হুকুমের) অমান্য করল। (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদিস: ৪২৮১)
সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,
صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللهُ بِهَا عَلَيْكُمْ، فَاقْبَلُوا صَدَقَتَهُ.
(কসর নামায) সদকা, আল্লাহ তাআলা তা তোমাদের দান করেছেন। অতএব, তোমরা আল্লাহ তাআলার দানকে কবুল করে নাও। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৬)
সহিহ মুসলিমে মূসা ইবনে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন,
سَأَلْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ: كَيْفَ أُصَلِّي إِذَا كُنْتُ بِمَكَّةَ، إِذَا لَمْ أُصَلِّ مَعَ الْإِمَامِ؟ فَقَالَ : رَكْعَتَيْنِ سُنَّةَ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.-)কে জিজ্ঞাসা করলাম মক্কায় অবস্থানকালে ইমামের পেছনে যখন নামায আদায় না করব তখন কীভাবে নামায পড়ব? তিনি বললেন দুই রাকাত পড়বে। এটা আবুল কাসেম (সা.)- সুন্নাহ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৮)
সফর অবস্থায় নামায কসর করা সম্পর্কে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। এ সকল হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামায কসর পড়েছেন। সফর অবস্থায় তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায পূর্ণ পড়েছেন এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
অনুরূপ এটাও জানা গেল যে সফর অবস্থায় নামায ফরযই থাকে কেবল দুই রাকাত করে।
এসকল হাদিস ও আছারের উপর ভিত্তি করে ফিকহবিদগণ বলেছেন মুসাফির যখন একাকী বা মুসাফির ইমামের পেছনে নামায পড়বে তখন তার জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায কসর করা ওয়াজিব।
হাঁ, মুসাফির যদি মুকীম ইমামের পেছনে নামায পড়ে সেক্ষেত্রে সে ইমামের অনুসরণে চার রাকাতই পড়বে। দুই রাকাত পড়বে না।
এক্ষেত্রে মুক্তাদির জন্য চার রাকাত নামায পড়া সাহাবা কেরামের আমল ও আছার দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে। যেমন:
নাফে (রাহ.) বলেন,
أنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يُصَلِّي وَرَاءَ الْإِمَامِ، بِمِنًى أَرْبَعاً. فَإِذَا صَلَّى لِنَفْسِهِ، صَلَّى رَكْعَتَيْنِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) মিনায় ইমামের পেছনে চার রাকাত পড়তেন। আর যখন একাকী পড়তেন তখন দুই রাকাত পড়তেন। (মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৫০৬)
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/29357/article-details.html