প্রশ্ন
আমাদের পাশের বাড়িতে এক হিন্দু পরিবার থাকে। আর্থিকভাবে তারা অসচ্ছল। খেটে খাওয়া মানুষ। গত কয়েকদিন আগে ঐ পরিবারের বড় ছেলে অসুস্থ হয়ে যায়। অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরলে আমার স্ত্রী বলল, বিপ্লব কুমারের বড় ছেলেটা খুব অসুস্থ। বেচারা গরিব মানুষ। হয়ত চিকিৎসাও করতে পারবে না। যদি একটু দেখে আসতেন। কথাটা খুব যৌক্তিক মনে হল। তাই বাজার থেকে কিছু ফলমূল ও শুকনো খাবার নিয়ে ছেলেটাকে দেখতে গেলাম। আর আসার সময় ছেলেটিকে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য বেশ কিছু টাকাও দিয়ে এলাম। কিন্তু পরের দিন ফজর নামাযের পর আমার এক চাচাতো ভাই বলল, আপনি নাকি বিপ্লব কুমারের ছেলেকে ফলমূল ইত্যাদি নিয়ে দেখতে গেছেন এবং আর্থিক সাহায্যও করেছেন? আমি বললাম, হাঁ। সে বলল, তারা তো হিন্দু, মুশরিক। এরা তো ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু। আপনি অনেক বড় গুনাহ করেছেন। আপনার তওবা করা উচিত। তাই হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, তাদেরকে সহযোগিতা করায় আমার কি গুনাহ হয়েছে? এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কী?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও তার সাথে সদাচরণ করা, বিপদাপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা, অসুস্থ হলে খোঁজ-খবর নেওয়া ও সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لَا یَنْهٰىكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِیْنَ لَمْ یُقَاتِلُوْكُمْ فِی الدِّیْنِ وَلَمْ یُخْرِجُوْكُمْ مِّنْ دِیَارِكُمْ اَنْ تَبَرُّوْهُمْ وَ تُقْسِطُوْۤا اِلَیْهِمْ، اِنَّ اللهَ یُحِبُّ الْمُقْسِطِیْنَ.
দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)
হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আনাস (রা.) বলেন-
أَنّ غُلاَمًا لِيَهُودَ كَانَ يَخْدُمُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَمَرِضَ فَأَتَاهُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَعُودُهُ، فَقَالَ: أَسْلِمْ، فَأَسْلَمَ.
এক ইহুদী বালক রাসূল (সা.)-এর খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হলে রাসূল (সা.) তাকে দেখতে গেলেন। অতপর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। ফলে সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৫৭)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হিন্দু ছেলেটাকে দেখতে যাওয়া ও আর্থিক সহযোগিতা করা অন্যায় হয়নি; বরং প্রতিবেশীর হক আদায়ের কারণে তা প্রসংশনীয় গণ্য হবে।
তবে অসুমলিমদের সাথে ঘনিষ্ঠতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়া নিষেধ। কুরআনুল কারীমে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
-উমদাতুল কারী ২১/২১৮; ফাতহুল বারী ৩/২৬২; ১০/১২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৮
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=29241&preview=true