প্রশ্ন
আমার অতি নিকটাত্মীয় কয়েকজন ২০১৫ সাল হতে তাদের আত্মীয়দের যাকাত দিয়ে আসছে। কিন্তু যাদেরকে যাকাত দিচ্ছে তারা সবাই যাকাত পাওয়ার মত গরিব নয়। মাসআলা না জানার কারণেই এমনটা হচ্ছে। তাই জানতে চাই, কেমন গরিবকে যাকাত দেওয়া যায়। যাকাতের যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও এতদিন যা দেওয়া হয়েছে তার হুকুম কী? যাকাত প্রদানকারীরা মহিলা। তাদের সঠিক মাসআলা জানা নেই এবং জানার আগ্রহও নেই।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
শরীয়তে সম্পদশালী ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয হওয়ার বিধানের পাশাপাশি কাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই যাকাতযোগ্য সম্পদের ২.৫% যে কাউকে দিয়ে দেওয়ার দ্বারাই যাকাত আদায় হয়ে যাবে না; বরং উপযুক্ত খাতে যাকাত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করাও যাকাতদাতার কর্তব্য। এবং কাকে যাকাত দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না- এ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাও কর্তব্য।
আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হল আপনার নিকটাত্মীয়দের এ বিষয়টি বোঝানো যে, যাকাত গরিবদের হক। কেউ নেসাব পরিমাণ তথা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমপরিমাণ প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। এ কাজটি আপনি নিজেও করতে পারেন। অন্য কারো মাধ্যমেও করাতে পারেন। এছাড়াও ঐ মহিলাদেরকে যাকাতের মাসায়িল বিষয়ক নির্ভরযোগ্য দ্বীনী কিতাবাদি পড়তে দিতে পারেন।
উল্লেখ্য, অভাবী আত্মীয়-স্বজন যাকাত গ্রহণের মতো গরিব না হলেও যাকাত ছাড়া সামর্থ্য অনুযায়ী নফল দান থেকে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যেতে পারে। কেননা, সামর্থ্যবানদের সম্পদে ফরয, ওয়াজিব দান ছাড়াও দরিদ্র প্রতিবেশীদের ও আত্মীয়দের হক রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَ فِیْۤ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآىِٕلِ وَ الْمَحْرُوْمِ.
আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে সাহায্যপ্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক। (সূরা যারিয়াত, আয়াত: ১৯)
আর মাসআলার জ্ঞান না থাকার কারণে যে যাকাতের যোগ্য নয় তাকে যাকাত দিয়ে দিলে আদায় হবে না। ঐ যাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে। তবে হাঁ, সাহায্য চাওয়ার কারণে প্রকৃত হকদার মনে করে যাকাত দিয়ে থাকলে তা আদায় হয়ে যাবে।
-সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৯৫; জামে তিরমিযি, হাদিস: ৬৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২, ২১৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৭, ১৬২-১৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৪৮, ৩৫৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৫-৭
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=28966&preview=true