প্রশ্ন
কিছুদিন আগে জানতে পারি, আমাদের পাশের বাড়ির আব্দুর রহিম সাহেব চিকিৎসার খরচ যোগানোর উদ্দেশ্যে একটি ফসলের জমি বিক্রি করবে। একদিন তার সাথে জমির অবস্থান, পরিমাণ ও দাম-দস্তুর নিয়ে কথা হয়। তখন আমি জমিটি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। তবে পাকা কথা দেইনি। তারপর গত ১৬-১১-২০১৮ তারিখ শুক্রবার তার বাড়িতে গিয়ে জমি কেনার ব্যাপারে তার সাথে পাকা কথা হয়। মূল্য নির্ধারণ হয় আড়াই লক্ষ টাকা। তখন বায়নাস্বরূপ ৫০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে আসি। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য পনের দিন সময় নেই। এসময়ে আমি বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ করতে থাকি। তার সাথে আমার কোনো লিখিত বায়না চুক্তি হয়নি। মৌখিক যে চুক্তি হয়েছিল নিচে উল্লেখ করছি। আমি তার বাড়িতে গিয়ে বলি, আমি আপনার ঐ জমিটি কিনতে এসেছি। তো সবশেষ আপনি কত টাকা রাখবেন? সে বলল, দুই লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। আমি বললাম, আমি আড়াই লক্ষ টাকা দিব। সে আরো ১০ হাজার দাবি করে। অনেক জোরাজুরির পর সে রাজি হল যে, আচ্ছা আড়াই লক্ষ টাকায় দিলাম। টাকা কবে দিবেন? আমি বললাম এখনই ৫০ হাজার দিয়ে বায়না করছি, বাকি টাকা পনের দিনের মধ্যে দিব। সে বলল, পূর্ণ টাকা পরিশোধের পর আমি জমি রেজিস্ট্রি করে দিব। এক সপ্তাহ পর তিনি একদিন আমার বাড়িতে এসে বলেন, আমার টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আমি আর ঐ জমি বিক্রি করব না। আপনার ৫০ হাজার টাকার সাথে আমি আরো ১০ হাজার টাকা দিব তারপরও আপনি জমিটির দাবি ছেড়ে দিন। আমার প্রশ্ন হল, এখন এভাবে তার জন্য পূর্বের চুক্তি থেকে ফিরে আসার সুযোগ আছে কি না? কেননা সেক্ষেত্রে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। আর তার দাবি মেনে নিয়ে আমি যদি জমিটি ছেড়েও দেই তাহলে আমার জন্য অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি না?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনি যদি বিক্রেতার প্রয়োজন বিবেচনা করে ক্রয়চুক্তিটি বাতিল করে দেন তাহলে সওয়াবের অধিকারী হবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-
مَنْ أَقَالَ نَادِمًا بَيْعَتَهُ، أَقَالَ اللهُ عَثرَتهُ يَومَ القيَامَة.
যে (বিক্রয় চুক্তিতে) অনুতপ্ত কোনো ব্যক্তির সাথে কৃত বিক্রয়চুক্তি বাতিল করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫০২৯)
সেক্ষেত্রে কেবল আপনার দেওয়া ৫০ হাজার টাকাই ফেরত নিতে পারবেন। অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া জায়েয হবে না। তবে যদি আপনি এমনটি না করেন তাহলে বিক্রেতার জন্য একতরফাভাবে এ চুক্তি বাতিল করে দেওয়া বা জমি দিতে অস্বীকৃতি জানানো জায়েয নয়। কারণ বায়নার টাকা দেওয়ার দ্বারাই আপনাদের মধ্যকার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। অতএব আপনার দায়িত্ব, যথাসময়ে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করা। আর বিক্রেতার কর্তব্য, সময়মত রেজিস্ট্রি করে জমি বুঝিয়ে দেওয়া।
-মুখতাসারুত তহাবী, পৃ. ৭৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৫৯৪; আলইখতিয়ার ২/২৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/১২৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/১০৪; বযলুল মাজহুদ ১৫/১৩৪
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=28829&preview=true