প্রশ্ন
আমার কয়েকটি বিষয় জানার ছিল,
১. আমি বিগত সময় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্টে কিছু টাকা জমা রেখেছিলাম। যার লাভের হার ছিল ৪%। এই লাভের টাকা আমি কোনোদিনই ভোগ করিনি এবং কোনোদিন করবও না ইনশাআল্লাহ। এই লাভের টাকা দিয়ে বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসার টয়েলেট ও প্রস্রাব খানা তৈরি করার কাজে ব্যয় করা হয়। এখন অন্য ব্যাংকে যদি জমা রাখি তাহলে সেই ব্যাংক আমাকে ৫.৫% হারে লাভ দিবে। উল্লেখ থাকে যে, সেই টাকাও বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসার টয়লেট ও প্রস্রাব খানা তৈরি করার কাজে ব্যয় করা হবে। এখন জানাবেন যে, বেশি লাভের জন্য আমি অন্য ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারব কি না?
২. আমার ব্যবসা পরিচালনার জন্য কোম্পানীর নামে একাধিক ব্যাংকে চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট চালু আছে এবং লেনদেন করছি। ঐসকল ব্যাংকগুলো তাদের ব্যাংকে লেনদেন করার কারণে বাৎসরিক সার্ভিস চার্জ বাবদ টাকা কেটে নেয়। আমি অন্য ব্যাংক থেকে যে সুদ বা লাভের টাকা পাব তা দিয়ে উক্ত সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে পারব কি না?
৩. আমার কোম্পানীর ওভেন, ডায়ার ও চুলা ব্যবহারের নতুন গ্যাস লাইন বর্ধিত করার জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ ১০ লক্ষ টাকা তিতাস গ্যাস কোম্পানীকে দিতে হবে। উক্ত ব্যাংক গ্যারান্টির ১০ লক্ষ টাকা নগদ জমা দিলে আমাকে ২% হারে সুদ বা লাভ দিবে ব্যাংক এবং জামানতও দেওয়া হবে। আর যদি নগদ ৩ লক্ষ টাকা জামানত বাবদ জমা দেওয়া হয় তাহলে ব্যাংকে বছর শেষে আরো ছয় হাজার টাকা অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। এখন আমার জানার ইচ্ছা যে, উক্ত সুদ বা লাভের টাকা অন্য ব্যাংক একাউন্টের সুদ বা লাভের টাকা থেকে পরিশোধ করা যাবে কি না?
মোটকথা হল, এক ব্যাংকের সুদ বা লাভের টাকা দিয়ে অন্য ব্যাংকের সুদ বা লাভের টাকা পরিশোধ করা যাবে কি না?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
১. একাউন্টের অতিরিক্ত টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করার নিয়তেও প্রচলিত সুদী ব্যাংকে সঞ্চয়ী বা মেয়াদী হিসাব খোলা জায়েয হবে না। কেননা সুদী ব্যাংকে এ ধরনের একাউন্ট খুলতে হলে সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয়। তাই সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা রাখার বিশেষ প্রয়োজন হলে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে রেখে প্রাপ্ত মুনাফা গরীব-মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে।
মসজিদ-মাদরাসার ব্যবহারকারী যেহেতু শুধু গরীবরাই নয় তাই এ ধরেনর কাজে ব্যয় না করে ভবিষ্যতে গরীবদেরকে দিয়ে দিবেন। তবে কিছু উলামায়ে কেরাম যেহেতু এ ধরনের টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করার অনুমতি দিয়ে থাকেন তাই অতীতে ঐ টাকা দিয়ে বাথরুম-প্রস্রাবখানা তৈরি করার দ্বারাও আপনি দায়মুক্ত হয়ে গেছেন।
২. সরকারি কর কেটে নেওয়ার পর যে নীট সুদ বা মুনাফা একাউন্টহোল্ডারদের একাউন্টে জমা থাকবে তার সবটুকুই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের দিয়ে দিতে হবে। বিভিন্ন চার্জ বাবদ ব্যাংক যে টাকা কেটে রাখে তা ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত সুদ বা লাভের টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে না। কেননা ব্যাংক একাউন্টহোল্ডারদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের বিনিময় হিসাবেই এসব চার্জ নিয়ে থাকে, আর কিছু টাকা সরকার চার্জ করে থাকে। তাই সুদ দ্বারা ব্যাংকের চার্জ আদায় করলে নিজের কাজে সুদ ব্যবহার করা হয়ে যায়। সুতরাং এমনটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ গরীব-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে। এর দ্বারা অন্য ব্যাংক বা একাউন্টের সুদ পরিশোধ করা বৈধ হবে না।
আর পুরো টাকা নগদ না দিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেহেতু বছরে অতিরিক্ত ছয় হাজার টাকা দিতে হবে, যা শরীয়তসম্মত নয়, তাই আপনার কর্তব্য হল ব্যাংক গ্যারান্টির দশ লক্ষ টাকা নগদ জমা দেওয়া এবং তা থেকে প্রাপ্ত সুদ গরীবদের দিয়ে দেওয়া।
-সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৫৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ২৩৫৯৩, ২৩৫৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২২১; বাযলুল মাজহুদ ১/১৪৮; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৯, ১/৭৯৭
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=28730&preview=true