প্রশ্ন
আমি শুনেছি যে, মহিলারা মাহরাম ব্যতিরেকে আটচল্লিশ মাইল বা এর চেয়ে বেশি দূরত্বের সফর একাকী করতে পারে না। যে পরিমাণ অর্থ থাকলে হজ্ব ফরয হয় তা আমার আছে। কিন্তু মাহরামকে সঙ্গে নেয়ার মতো পথ খরচ ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের মতো সামর্থ্য আমার নেই। এদিকে আমার পড়শী এক দম্পতি এ বছরই হজ্বে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রতিবেশী মহিলার সাথে আমি কি হজ্বের সফরে যেতে পারি? কারণ আমার না হলেও তার তো মাহরাম আছে এবং এতে করে মাহরামের যে প্রয়োজনীয়তা, তথা নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত হওয়া- তা তো হয়েই যাচ্ছে। আর যদি এভাবেও আমার যাওয়ার অনুমতি না থাকে শরীয়তে তাহলে ফরয হজ্ব আদায়ে আমার করণীয় কী?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
মাহরাম ছাড়া মহিলাদের হজ্বে যাওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েয নয়। হাদিস শরিফে রাসূলে কারীম (সা.) সাধারণ সফর এবং হজ্বের সফর সকল ক্ষেত্রেই মাহরাম ছাড়া মহিলাদের একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।
عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ، عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: لاَ يَخْلُوَنّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ. فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، امْرَأَتِي خَرَجَتْ حَاجّةً، وَاكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، قَالَ: ارْجِعْ فَحُجّ مَعَ امْرَأَتِكَ.
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) নবী কারীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবীজী বলেছেন, কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে তার মাহরাম ব্যতিরেকে একাকী অবস্থান না করে। তখন এক ব্যক্তি উঠে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়েছি। ওদিকে আমার স্ত্রী হজ্বের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। নবীজী বললেন, ফিরে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্ব কর। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫২৩৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪১)
لَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ ثَلَاثًا، إِلّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ.
হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে কোনো নারী তিন দিন দূরত্বের পথে সফর করবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৮৬; সহিহ মুসলিম, হাহিস: ১৩৩৮)
لَا يَحِلّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ سَفَرًا يَكُونُ ثَلَاثَةَ أَيّامٍ فَصَاعِدًا، إِلّا وَمَعَهَا أَبُوهَا، أَوِ ابْنُهَا، أَوْ زَوْجُهَا، أَوْ أَخُوهَا، أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন, যে নারী আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য নিজের বাবা, ছেলে, স্বামী, ভাই বা অন্য কোনো মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে তিন দিন বা ততোধিক দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪০; সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৩/১৩৮)
এসব হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মাহরাম ছাড়া হজ্বের সফরে বের হওয়া যাবে না। আর এত সুস্পষ্ট হাদিস থাকার পর এখানে ভিন্ন কোনো যুক্তি দাঁড় করানো বাঞ্ছনীয় নয়। সুতরাং আপনার করণীয় হচ্ছে, মাহরামদের কেউ নিজ ব্যবস্থাপনায় হজ্বের সফরে বের হয় কি না সেদিকে নজর রাখা অথবা কোনো এক মাহরামকে নিজ খরচে হজ্বে নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ আপনার হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও দুটোর কোনোটাই না হয়, কিংবা ততোদিনে সফরে বের হওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা লোপ পেয়ে যায় তাহলে এমন ক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ্ব করাবেন।
-আদদুররুল মুখতার ২/৪৬৪-৪৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪-৩১৫; গুনয়াতুন নাসিক পৃষ্ঠা ২৬-২৭ ও ২৯; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ৭৬ ও ৭৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৫৬
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=28618&preview=true