প্রশ্ন
সেদিন মসজিদের ইমাম সাহেব থেকে একটি হাদিস শুনেছিলাম, যার অর্থ মোটামুটি এরকম- সন্তান বাবা-মাকে বখীল বানায়। আমি হাদিসটির পূর্ণ পাঠ, হাদিসের কোন কিতাবে হাদিসটি আছে, হাদিসটির মান এবং ব্যাখ্যা জানতে চাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
আপনি যে হাদিসটি জানতে চেয়েছেন তা বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে যথা- মুসতাদরাকে হাকেম, মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ইত্যাদিতে বর্ণিত হয়েছে। মুসতাদরাকে হাকেম গ্রন্থে হাদীসটির পাঠ নিম্নরুপ-
عَنْ يَعْلَى بْنِ مُنَبِّهٍ الثّقَفِيِّ، قَالَ جَاءَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ يَسْتَبِقَانِ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَضَمّهُمَا إِلَيْهِ ثُمّ قَالَ إِنّ الْوَلَدَ مَبْخَلَةٌ مَجْبَنَةٌ مَحْزَنَةٌ.
হযরত ইয়ালা ইবনে মুনাব্বিহ (রা.) বলেন, হাসান-হুসাইন (রা.) দৌড়ে নবী কারীম (সা.)-এর কাছে আসল। তখন তিনি তাদেরকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। এরপর বললেন, নিসন্দেহে সন্তানের কারণে মানুষ কৃপণতা, ভীরুতা ও দুশ্চিন্তার শিকার হয়। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৪৮২৫)
ইমাম হাকেম (রাহ.) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী, ইরাকী, বুসীরী প্রমুখ হাদিসবিশারদগণ হাদিসটির সনদকে সহিহ বলেছেন। (মিসবাহুয যুজাজাহ, হাদিস: ১২৮২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৬৬১৭; মুখতাসারুস সুনানিল কুবরা, যাহাবী, বর্ণনা: ১৬০৯৯; ফয়যুল কাদীর ২/৪০৩)
হাদিসটির ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট হাদিস ব্যাখ্যাকার মুনাভী (রাহ.) বলেন, مَبْخَلَةٌ কৃপণতার কারণ, অর্থাৎ সন্তান বাবা-মাকে কৃপণ বানায়। ফলে সন্তানের কারণে (কল্যাণ-খাতসমূহে) ব্যয় করতে কৃপণতা করে এবং তার মায়ায় জিহাদ ছেড়ে দেয়।
মাওয়ারদী (রাহ.) বলেন, এ হাদিস সন্তানের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার বার্তা দিচ্ছে যে, সন্তান এসকল আচরণের জন্ম দেয়…। مَحْزَنَةٌ অর্থাৎ সন্তানের কারণে বাবা-মার অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। যেমন অসুস্থ হলে কিংবা সন্তানের চাহিদা পূর্ণ করার সামর্থ্য না থাকলে ইত্যাদি কারণে। আর যদি সন্তান বড় হয়ে অবাধ্য হয়ে যায় তাহলে তো সেটি স্থায়ী কষ্ট ও পেরেশানীর কারণ হয়ে যায়।
অর্থাৎ এ হাদিসের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে যে, মানুষ যেন সন্তানের মহব্বত ও ভালোবাসায় আল্লাহর বিধানকে লঙ্ঘন না করে। আল্লাহর বিধান পালনে সন্তানের মহব্বত যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَ لَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْخٰسِرُوْنَ .
হে মুমিনগণ! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে গাফেল না করে। যারা এরকম করবে (অর্থাৎ গাফেল হবে) তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুনাফিকূন, আয়াত: ৯)
আরো ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّمَا اَمْوَالُكُمْ وَ اَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ.
তোমাদের ধণ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। (সূরা তাগাবুন,আয়াত: ১৫)
অর্থাৎ তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হয় যে, তোমরা অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ভালবাসায় আল্লাহর হুকুমের বিষয়ে গাফেল হয়ে যাও কি না।
মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ১/১৫৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৫০৫
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=28312&preview=true