প্রশ্ন
আমার পিতার ইন্তেকালের পর আমিই আমার ভাই-বোনদের দেখাশোনা করছি। কিছুদিন আগে আমার ছোট বোনের বিবাহ দিই। বিবাহে আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যদের আপ্যায়ন করি। উক্ত আপ্যায়নে অলঙ্কার ছাড়া নগদ অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী মিলে প্রায় ৪০ হাজার টাকার উপঢৌকন উঠেছে। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, এ উপঢৌকনের মালিক কে? সবগুলো আমার বোনকে দিয়ে দিতে হবে নাকি আমাদের ব্যবহার করার অনুমতি আছে? মাসআলাটির সঠিক সমাধানে হুযুরের সুমর্জি কামনা করছি।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে যেসকল উপঢৌকন দেওয়া হয় তা যদি নির্দিষ্ট কাউকে দেওয়া হয়েছে বলে বোঝা যায় বা উপহারদাতা নির্দিষ্ট কারো নাম বলে দেয় তাহলে সে-ই উক্ত উপহারের মালিক বলে বিবেচিত হবে। যেমন উপহারদাতা মেয়ের নাম বলে দিলে বা মেয়ের একান্ত ব্যবহার্য জিনিসপত্র উপহার দিলে তার মালিক মেয়ে হবে। এসব উপহার তার অনুমতি ছাড়া অন্য কারো নেওয়া বৈধ হবে না। আর অন্যান্য উপহারের মালিক কে হবে- সে বিষয়টি প্রত্যেক সমাজের প্রচলন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। যেমন কোনো সমাজে যদি এমন প্রচলন থাকে যে, বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে অনির্দিষ্টভাবে যা কিছু উপহার দেওয়া হয় তা অভিভাবকদেরকেই দেওয়া উদ্দেশ্য থাকে তবে অভিভাবকগণই তার মালিক বলে বিবেচিত হবে। চাই উক্ত উপহার নগদ অর্থ হোক বা ঘরে ব্যবহারের মত কোনো সামগ্রী বা অন্য যা-ই হোক। আর কোথাও অন্য কোনো প্রচলন থাকলে সেখানে তা-ই গ্রহণযোগ্য হবে।
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়ার যে প্রচলন রয়েছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে সহিহ নয়। এটা কুপ্রথার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া যেভাবে চেয়ার টেবিল নিয়ে উপহার গ্রহণ ও নিবন্ধনের আয়োজন করা হয় তা শুধু শরীয়তপরিপন্থীই নয়; বরং অনেক দৃষ্টিকটু।
প্রচলিত পদ্ধতিতে যেসকল আপত্তিকর বিষয় রয়েছে তার মধ্যে-
১. কেউ উপহার না দিলে তাকে ভিন্ন চোখে দেখা।
২. অনেকে ইচ্ছা বা সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও চক্ষু লজ্জার কারণে উপহার দিয়ে থাকে। আর এভাবে দেওয়ার কারণে তা বৈধও হয় না।
৩. উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপহার না দিতে পারলে সমালোচিত হওয়ার ভয়ে অনেকে দাওয়াতে শরিক হওয়া থেকে বিরত থাকে।
৪. তাছাড়া কৃত্তিমতা, লৌকিকতা, সৌজন্য রক্ষা ও বড় কোনো উপহার দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বাহবা কুড়ানোর মানসিকতা তো রয়েছেই। আর এ সবই ইসলামের শিক্ষা পরিপন্থী। তাই বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে এধরনের উপহার দেওয়া-নেওয়ার প্রচলন সংশোধনযোগ্য।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৮০; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/১১৫; আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া পৃ. ৩০৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৯৬
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=28047&preview=true