প্রশ্ন
আমার ও আমার স্ত্রীর মাঝে পারিবারিক কিছু বিষয়ে ঝগড়া হয়েছিল। তখন আমি তাকে রাগের মাথায় বলেছিলাম, ‘আজ থেকে তোকে তালাক দিয়ে দিলাম।’ প্রতি উত্তরে সে বলেছিল, ‘তালাক দিয়ে লাভ কী? কিছুদিন পর আবার তো ফিরিয়ে নেবেন।’ একথা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে যায় এবং তার কথার জবাবে বলে ফেলি, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে তোকে আর ফিরিয়ে নেব না।’ তখন তার বাবা এসে তাকে বাপের বাড়ি নিয়ে যায়। তখন থেকে এ পর্যন্ত (প্রায় ২৫/২৬ দিন) তার সাথে আমার আর কোনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। অবশ্য প্রয়োজনে ফোনে এক-দুবার কথা হয়েছে। কিন্তু ইদানীং ফোন করে সে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে এবং তার কৃতকর্মের ওপর অনুশোচনা প্রকাশ করছে। আমারও তার সাথে আবার সংসার করার ইচ্ছা আছে।
তাই জানতে চাচ্ছি, উক্ত অবস্থায় তার ওপর কয় তালাক এবং কোন ধরনের তালাক পতিত হয়েছে? পুনরায় সংসার করতে চাইলে কীভাবে কী করতে হবে? আশা করি সবিস্তারে জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে ‘আজ থেকে তোকে তালাক দিয়ে দিলাম’ একথা বলার দ্বারা তার ওপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। অতঃপর ‘তোকে আর ফিরিয়ে নেব না’- এ কথা বলার দ্বারা কোনো কিছু হয়নি। সুতরাং ইদ্দতের মধ্যে তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিলে আপনার দাম্পত্য সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ দোহরাতে হবে না। আর ফিরিয়ে নেয়ার উত্তম পদ্ধতি হল, মৌখিকভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করা। যেমন আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিলাম। কিন্তু মহিলাকে যদি ইদ্দতের ভেতর (অর্থাৎ স্ত্রী ঋতুমতী হলে তিনটি স্রাব অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত, অন্তঃসত্তা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত) মৌখিকভাবে কিংবা একসাথে থাকার মাধ্যমে যদি ফিরিয়ে না নেওয়া হয়, তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার পরে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পুনরায় ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন করে মহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে যথানিয়মে আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
উল্লেখ্য, স্ত্রীকে ইদ্দতের ভেতর ফিরিয়ে নেওয়া হোক বা ইদ্দত শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে তাকে গ্রহণ করা হোক, উভয় ক্ষেত্রেই আপনি ভবিষ্যতে আর মাত্র দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে শুধু দুই তালাক দিলেই বর্তমান তালাকটিসহ মোট তিন তালাক হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। এরপর পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ারও সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৮৩ ও ২৯৫; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৮৮;আততাজরীদ, কুদূরী ১০/৪৮৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬৮; রদ্দুল মুহতার ৩/২৭৯
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=27520&preview=true