প্রশ্ন
জুমার খুতবার আজানের কি জবাব দিতে হবে নাকি হবে না? এক আলেমের কাছে শুনেছি, এই আযানের জবাব দেওয়া যাবে না। তার কথা কি ঠিক আছে? এক্ষেত্রে শরীয়ত কি বলে?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
জুমার খুতবার আযানের জবাবা দেওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণ থেকে দুই ধরনের মতামতই রয়েছে। একটি মতে, এ আযানের জবাব দেওয়া যাবে না। এক বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَابْنِ عُمَرَ؛ أَنَّهُمَا كَانَا يَكْرَهَانِ الصَّلاَة وَالْكَلاَمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بَعْدَ خُرُوجِ الإِمَامِ.
আতা (রাহ.) থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তাঁরা জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবার জন্য বের হওয়ার পরে (মুসল্লীদের জন্য) নামায পড়া এবং কথা বলা অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৩৪০)
এই বর্ণনা এবং অন্যান্য আরও বর্ণনার আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, খুতবার আযানের জবাব দেওয়া যাবে না।
পক্ষান্তরে সহিহ বুখারিতে হযরত আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
سَمِعْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ، وَهُوَ جَالِسٌ عَلَى المِنْبَرِ، أَذَّنَ المُؤَذِّنُ، قَالَ: اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، قَالَ مُعَاوِيَةُ: اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: وَأَنَا، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: وَأَنَا، فَلَمَّا أَنْ قَضَى التَّأْذِينَ، قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى هَذَا المَجْلِسِ، حِينَ أَذَّنَ المُؤَذِّنُ، يَقُولُ مَا سَمِعْتُمْ مِنِّي مِنْ مَقَالَتِي.
আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.)-কে দেখেছি, তিনি মিম্বারে বসা ছিলেন এবং মুআযযিন আযান দিলেন। মুআযযিন যখন বললেন, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ তখন মুআবিয়া (রা.) বললেন, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ। … যখন আযান শেষ হল তখন তিনি বললেন, হে লোকসকল! আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এই মজলিসে যখন মুআযযিন আযান দেয় তখন এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি তোমরা আমাকে বলতে শুনলে। (সহিহ বুখারি, হাদীস: ৯১৪)
এই হাদিসসহ আরও কিছু বর্ণনার আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, জুমার খুতবার আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রাহ.) বলেন-
خُرُوجُ الإِمَامِ يَقْطَعُ الصَّلاَةَ، وَكَلاَمُهُ يَقْطَعُ الْكَلاَمَ.
ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না এবং খুতবা শুরু করে দিলে আর কথা বলা যাবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৩৪২)
উল্লিখিত হাদিস ও আছারের আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, খুতবা শুরু করার আগে আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে। হিন্দুস্তানের একাধিক ফকীহ এ মত দিয়েছেন। আব্দুল হাই লখনোভী (রাহ.), মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রাহ.), যফর আহমাদ উসমানী (রাহ.), মুফতী আব্দুর রহীম লাজপুরী (রাহ.) প্রমুখ ফকীহগণ জুমার আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
সুতরাং কেউ যদি জুমার খুতবার আযানের জবাব দেয় তাহলে তাকে নিষেধ করা যাবে না।
-কিতাবুল আছল ১/৩০৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৮২; আসসিআয়াহ ২/৫৩; ফাতহুল বারী ২/৪৬০; উমদাতুল কারী ৬/২১৩; কিফায়াতুল মুফতী ৫/২০৫; ইমদাদুল আহকাম ১/৪১৯
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=26477&preview=true