প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইউটিউব, ফেসবুক, বা ইনস্ট্রাগ্রামে ইসলামিক ভিডিও বা ভালো ভিডিও আপলোড করে অর্থ উপার্জন করা কি হালাল হবে? বিভিন্ন ইসলামিক চ্যালেন তাদের এডভারটাইসমেন্ট অপশন চালু রেখেছে। এবং সেখান থেকে অর্থ উপার্জন হচ্ছে। এটি কি হালাল? আমি ইসলামিক ইতিহাস বা এই জাতীয় টপিক বা ভিডিও নিয়ে কাজ শুরু করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু এটা হালার হবে কিনা এব্যাপারে আমি দ্বিধায় আছি। আমার এই কাজের উদ্দেশ্য হলো নিজে জানা ও অন্যকে জানানো, পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জন করা। আর এমন অনেক ইসলামিক ওয়েব সাইট আছে যেখানে ইনরোল বা সাবস্ক্রাইব করতে হাদিয়া দেওয়া লাগে। আমি সম্পূর্ণ বিষয়টাই এই দৃষ্টিতে দেখে অর্থ উপার্জন করতে চাচ্ছিলাম। এতে আমার কর্ম স্পৃহা হয়তো বাড়বে।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রথমত প্রাণীর ছবি সম্বলিত ভিডিও তৈরি করা বিষয়ে ওলামাদের মত ভিন্নতা রয়েছে। যেসব ওলামায়ে কেরাম অশ্লীলতা মুক্ত, বাদ্য বাজানো ও নারীর ছবি প্রদর্শন ব্যতীত ভিডিওকে বৈধ বলেছেন তাদের কথা অনুযায়ী ভিডিও বানানোকে যদি বৈধ বলা হয়, তবে নিন্মোক্ত কথাগুলো সংযুক্ত থাকবে।
দ্বীন প্রচারের লক্ষ্যে ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ইসলামিক কনটেন্ট, ওয়াজ-নসিহত ও ইসলামী ইতিহাসের শিক্ষনীয় অংশগুলোর ভিডিও বানিয়ে আপলোড করা এবং সেগুলো দর্শকদেরকে দেখিয়ে উপার্জন করা খারাপ নয়।
তবে এই ভিডিওগুলো প্রদর্শনের সময় নিজের ইচ্ছার বাহিরে কোম্পানিগুলো কিছু এডভারটাইজমেন্ট দেখায়। যার মাঝে নারীর নাজায়েয ছবি, অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা ও মাঝে মাঝে হারাম পণ্যের প্রচারণা চলে আসে। সেই অ্যাড দেখানো থেকে যেই টাকা এর সাথে যুক্ত হচ্ছে সেগুলো হালাল নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করে অর্থ উপার্জন নিম্নোক্ত কয়েকটি শর্তে হালাল হবে।
১. সোশ্যাল মিডিয়ার মূল কোম্পানির সাথে সাবস্ক্রিপশন বিনিময় বিহীন ফ্রি হতে হবে।
২. উপার্জন ও বিনিময়ের উৎসমূল জানা থাকতে হবে।
৩. চ্যানেলে প্রচারিত এডগুলো সরাসরি কোন হারাম বস্তুর হতে পারবে না, কিংবা হারাম বস্তুর প্রতি উৎসহ যোগায় এমন কিছু হতে পারবে না। যদি হারাম পণ্য কিংবা হারামের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে এমন কিছু দেখায় সেক্ষেত্রে আপনিও হারামের সহযোগী হয়ে গেলেন। আল্লাহ তাআ’লা কুরআনুল কারীমে বলেছেন-
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ)
তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। -সূরা মা-ইদাহ ২
যদি আপনার চ্যানেলে হারাম এড বন্ধ না করতে পারেন সে ক্ষেত্রে এড প্রদর্শন করে উপার্জন করা হালাল হবে না।
অন্য ব্যক্তিকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত করতে কিংবা ভালো কাজের উৎসাহ দিতে গিয়ে নিজেকে হারাম উপার্জনের জড়িয়ে ফেলা বৈধ নয়।
সর্বোপরি কথা হল; এমন আশংকাজনক পন্থায় বা হারাম উপার্জনে জড়িয়ে দ্বীন প্রচার করতে আপনি বাধ্য নন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ” .
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে আহবান জানায় তার জন্য সে পথের অনুসারীদের সাওয়াবের অনুরূপ সাওয়াব রয়েছে। এতে তাদের সাওয়াব থেকে কিছুমাত্র ঘাটতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান জানাবে তার উপর তার অনুসারীদের গুনাহের অনুরূপ গুনাহ বর্তাবে। এতে তাদের গুনাহ থেকে কিছুমাত্র কম হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৫৬০)
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=26178&preview=true