প্রশ্ন
আসসালমুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আমার স্বামীর নামাজ বা দ্বীনের ক্ষেত্রে কোনো আগ্রহ নেই। তাকে আমি সবসময়ই নামাযের কথা বুঝানোর চেষ্টা করি। দ্বীনের পথে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। জবাবে সে বলে, করবো। কিন্তু সে একদিন নামাজ পরে ফের দুদিন গ্যাপ দায়। নামাযের বিষয়ে আমি কিছু বললে সে বলবে সবসময় এক কথা ভালো লাগেনা। এই সব বিষয় নিয়ে আরো কিছু কারণে গতপরশু রাত্রে আমাদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হয়। পরে আমি রাগের মাথায় ওকে বলি যে, আমি আর কোনোদিন এইসব বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। আর আমি এ ব্যাপারে কসম দিয়ে ফেলি।এখন আমি মানসিকভাবে খুব অস্বস্তিতে আছি এই কসমের কারণে। আমি কিভাবে তাকে নামাযের কথা বলব? আমার কসমের কারণে তো আর বলতেও পারব না। বরং আমি আল্লাহর কাছে গুনাহগার হিসেবে গণ্য হবো। এখন আমি কিভাবে আল্লাহর কাছে এই বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করব আর ওকে কিছু না বলে কিভাবে দ্বীনের প্রতি উৎসাহী করব?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
আপনি আপনার স্বামীকে বলতে থাকুন। বলতে বলতে এক দিন তার মাঝে পরিবর্তন আসবেই আসবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়া আপনার দায়িত্ব তাকে বলে যাওয়া। তার তকদিরে থাকলে সে মানবে। তকদির না থাকলে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে মানার তৌফিক নসীব করুক। দোয়া করি।
আর আপনি যে কসম খেয়েছেন এই বিষয়ে কোনো পেরেশানি নেই। এই ধরনের অন্যায়ের উপর কসম করলে সেই কসম ভেঙ্গে ফেলা উচিত। কসম ভেঙ্গে কাফফারাহ প্রদান করুন। আর তাকে বলতে থাকুন এ নিয়ে মোটেও পেরেশানি করবেন না।
হাদিস শরিফে এসেছে,
وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَاللهِ لأنْ يَلِجَّ أَحَدُكُمْ بِيَمِينِهِ فِي أَهْلِهِ آثَمُ لَهُ عِنْدَ اللهِ مِنْ أَنْ يُعْطِيَ كَفَّارَتَهُ الَّتِي افْتَرَضَ اللهُ عَلَيْهِ
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-
আল্লাহ্র কসম! তোমাদের মাঝে কেউ আপন পরিজন সম্পর্কে শপথ করে এবং সে এর কাফ্ফারা আদায় করার পরিবর্তে- যা আল্লাহ ফরয করেছেন- শপথে অনড় থাকে, তাহলে সে আল্লাহ্র নিকট গুনাহগার হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৬২৫)
কসম ভঙ্গের কাফফারাহ হলো :
لَا یُؤَاخِذُکُمُ اللّٰہُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِکُمۡ وَلٰکِنۡ یُّؤَاخِذُکُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ ۚ فَکَفَّارَتُہٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰکِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَہۡلِیۡکُمۡ اَوۡ کِسۡوَتُہُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ ؕ ذٰلِکَ کَفَّارَۃُ اَیۡمَانِکُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ ؕ وَاحۡفَظُوۡۤا اَیۡمَانَکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمۡ اٰیٰتِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে নিরর্থক শপথের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেন না। কিন্তু তোমরা যে শপথ পরিপক্কভাবে করে থাক, সেজন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। সুতরাং তার কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাবার দেবে, যা তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে খাইয়ে থাক অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করবে কিংবা একজন গোলাম আযাদ করবে। তবে কারও কাছে যদি (এসব জিনিসের মধ্য হতে কিছুই) না থাকে, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ করবে (এবং তারপর তা ভেঙ্গে ফেলবে তোমরা নিজেদের শপথকে রক্ষা করো। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের সামনে নিজ আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর। (আল মায়িদাহ – ৮৯)
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/26149/article-details.html