প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় কোনো কোনো হুজুর জানাযার পর পর দাফনের পূর্বে হাত উঠিয়ে সম্মিলিত দুআ করে থাকেন। আবার আলেমকে দেখা যায় এটাকে নাজায়েয বলেন। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, জানাযার পর পর দাফনের পূর্বে হাত উঠিয়ে সম্মিলিত দুআ করা জায়েয আছে কি না? কুরআন-হাদিসের আলোকে সমাধান জানালে উপকৃত হব। জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
জানাযা নামাযের সালাম ফেরানোর পর প্রচলিত দুআ-মোনাজাত শরীয়ত কর্তৃক প্রমাণিত নয়। কারণ জানাযা নামাযই হচ্ছে মায়্যিতের জন্য দুআস্বরুপ। আর কোনো হাদিসে বা সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে জানাযা নামাযের পর আবার দুআ করার কোনো প্রমাণ নেই। সেযুগে অসংখ্য সাহাবা-তাবেয়ীনের জানাযা নামায আদায় হয়েছে। কিন্তু তারা জানাযা নামাযের সালাম ফেরানোর পর সম্মিলিত বা একাকী দুআ করেননি এবং এসময় দুআ করার কোনো বক্তব্যও হাদিস-আছারে কোথা্ও বর্ণিত নেই। তাছাড়া ফকীহগণও স্পষ্টভাষায় জানাযা নামাযের পর দুআ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, হানাফী মাযহাবের ফিকহ-ফতোয়ার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘খুলাসাতুল ফাতাওয়া’য় আছে-
لا يقوم بالدعاء بعد صلاة الجنازة.
অর্থাৎ জানাযা নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়াবে না। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫)
হানাফী মাযহাবে ফতোওয়ার প্রসিদ্ধ আরেক কিতাব ‘ফতোয়া বায্যাযিয়া’য় উল্লেখ হয়েছে-
لا يقوم بالدعاء بعد صلاة الجنائز؛ لأنه دعا مرة؛ لأن أكثرها دعاء.
জানাযা নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়াবে না। কেননা (জানাযার নামাযে) একবার তো দুআ করেছেই। কারণ, জানাযার অধিকাংশটাই হচ্ছে (মৃতের জন্য) দুআ। (ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮০)
সুতরাং জানাযা নামাযের পর দুআ করার যে প্রচলন কোথাও কোথাও লক্ষ করা যায় তা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ। তা পরিত্যাগ করা কর্তব্য।
অবশ্য মায়্যিতকে দাফন করার পর সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে মায়্যিতের জন্য দুআ-ইস্তিগফার করা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-
كَانَ النّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَه بِالتّثْبِيتِ، فَإِنّهُ الْآنَ يُسْأَلُ.
নবী কারীম (সা.) যখন কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন তখন তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাতের দুআ কর এবং সে যেন (প্রশ্নের জবাবে) সুদৃঢ় থাকতে পারে সে দুআ কর। এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩২১৩)
―শরহু সুনানে আবু দাউদ, আইনী ৪/২৭৫; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৭১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৯০; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ১৬৪; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৪৯; ইমদাদুল আহকাম ১/১৯৪
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/26145/article-details.html