প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ঘুমানোর আগে কী কী আমল করা যেতে পারে? দয়া করে জানাবেন ।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
ঘুমানোর আগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল দেওয়া হলো—
এক. ‘তিনকুল’ পড়ে ফুঁ দেওয়া
হাদিসে শরিফে এসেছে,
يجمع كفيه ثم ينفث فيهما فيقرأ ( قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) ( قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) ( قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ) ثم يمسح بهما ما استطاع من جسده يبدأ بهما على رأسه ووجهه وما أقبل من جسده يفعل ذلك ثلاث مرات )، رواه البخاري .
দুই হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে তাতে ফুঁ দেবে। তারপর দুই হাতের তালুর মাধ্যমে দেহের যতোটা অংশ সম্ভব— মাসেহ করবে। মাসেহ শুরু করবে— মাথা, মুখমণ্ডল ও দেহের সামনের দিক থেকে (এভাবে ৩ বার করবে)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
দুই. আয়াতুল কুরসি পড়া।
প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পড়বে, শয়তান সারারাত তার কাছে আসবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
তিন. সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত তেলাওয়াত করা।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (আ-মানার রাসুলু বিমা–) তেলাওয়াত করবে, এটা তার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮)
চার. সুরা কাফিরুন পাঠ করা
প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘রাতে (কুল ইয়া আইয়্যু হাল কা-ফিরুন) (অর্থাৎ সুরা কা-ফিরুন) পাঠ করা শিরক থেকে মুক্তি পেতে উপকারী।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ৬০২)
পাঁচ. ‘কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ’ পাঠ করা।
একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) তার সাহাবাদের বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পড়তে অসমর্থ হবে?’ এতে সকলকে বিষয়টি ভারী মনে করল। বলল, এই কাজ আমাদের মধ্যে কে পারবে— হে আল্লাহর রাসুল!? তখন তিনি বললেন, ‘সুরা ইখলাস হলো- এক-তৃতীয়াংশ কোরআন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৫)
ছয়. ডান হাত গালের নিচে রেখে দোয়া পড়া।
আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন, তখন তার ডান হাত তার গালের নীচে রাখতেন, তারপর এ দোয়াটি বলতেন-
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑِﺎﺳْﻤِﻚَ ﺃَﻣُﻮﺕُ ﻭَﺃَﺣْﻴَﺎ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমু-তু ওয়া আহ্ইয়া
অর্থ : হে আল্লাহ্! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)
সাত. তাসবিহের আমল করা।
হাদিস শরিফে আছে,
عن علي رضي الله عنه ، أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال حين طلبت منه فاطمة -رضي الله عنها- خادمًا: “ألا أدلكما على ما هو خير لكما من خادم ؟ إذا أويتما إلى فراشكما ، أو أخذتما مضاجعكما ، فكبرا أربعًا وثلاثين ، وسبحا ثلاثًا وثلاثين ، واحمدا ثلاثًا وثلاثين. فهذا خير لكما من خادم” [متفق عليه: 6318 – 6915].
আল্লাহর রাসুল (সা.) তার মেয়ে ও জামাতা ফতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.)- কে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেবো না, যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা (৩৩) বার সুবহানাল্লাহ, (৩৩) বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং (৩৪) বার আল্লাহু আকবার বলবে; তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৭০৫)
আট. সুরা মুলক পাঠ করা
আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যাক্তি প্রত্যেক রাতে তাবারকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক (সুরা মূলক) পাঠ করবে— এর মাধ্যমে মহিয়ান আল্লাহ্ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।’ (জামে’ তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯০)
মহান আল্লাহ আমাদের এই আমলগুলো করার তাওফিক দিন এবং আমাদের সর্বোত্তম সওয়াব ও প্রতিদান দিন। আমিন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/26010/article-details.html