প্রশ্ন
দোয়ার সময় কেবলামুখী হওয়া কি আবশ্যক?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
না, দোয়র সময় কেবলামুখী হওয়া আবশ্যক নয় বরং মুস্তাহাব। রাসূল (সা.) সাধারণত কেবলামুখী হয়ে দোয়া করতেন। তবে প্রয়োজনে কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে দোয়া করাও রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত। হাদিস শরিফে এসেছে,
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ، قَالَ: نَظَرَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى المُشْرِكِينَ وَهُمْ أَلْفٌ وَأَصْحَابُهُ ثَلَاثُ مِائَةٍ وَبِضْعَةُ عَشَرَ رَجُلًا، فَاسْتَقْبَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم القِبْلَةَ، ثُمَّ مَدَّ يَدَيْهِ وَجَعَلَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ: «اللَّهُمَّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي، اللَّهُمَّ إِنَّكَ إِنْ تُهْلِكْ هَذِهِ العِصَابَةَ مِنْ أَهْلِ الإِسْلَامِ لَا تُعْبَدُ فِي الأَرْضِ»، فَمَا زَالَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ، مَادًّا يَدَيْهِ، مُسْتَقْبِلَ القِبْلَةِ حَتَّى سَقَطَ رِدَاؤُهُ مِنْ مَنْكِبَيْهِ
‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (বদর যুদ্ধের দিন) মুশরিকদের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃষ্টিপাত করলেন। তারা (সংখ্যায়) ছিল এক হাজার। আর তার সাথীরা ছিলেন তিন শত দশজনের কিছু বেশি। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে মুখ করে দুই হাত তুলে তার প্রভুর নিকট দু’আ করতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার সাথে যে ওয়াদাহ করেছিলে তা পূর্ণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তা দান কর যার ওয়াদাহ্ তুমি করেছ। হে আল্লাহ! যদি কতিপয় মুসলিমের এ ক্ষুদ্র দলটি ধ্বংস করে দাও তাহলে যমিনে তোমার ইবাদাত অনুষ্ঠিত হবে না”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে এমনভাবে তার প্রভুর নিকট ফারিয়াদ করেন, তার উভয় কাঁধ হতে তার চাদর গড়িয়ে পড়ে গেল।’ [সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ৩০৮১]
আরেক হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: «أَصَابَتِ النَّاسَ سَنَةٌ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَبَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ، قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، هَلَكَ الْمَالُ، وَجَاعَ الْعِيَالُ، فَادْعُ اللهَ لَنَا. فَرَفَعَ يَدَيْهِ، وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، مَا وَضَعَهَا حَتَّى ثَارَ السَّحَابُ أَمْثَالَ الْجِبَالِ، ثُمَّ لَمْ يَنْزِلْ عَنْ مِنْبَرِهِ حَتَّى رَأَيْتُ الْمَطَرَ يَتَحَادَرُ عَلَى لِحْيَتِهِ صلى الله عليه وسلم، فَمُطِرْنَا يَوْمَنَا ذَلِكَ، وَمِنَ الْغَدِ، وَبَعْدَ الْغَدِ، وَالَّذِي يَلِيهِ حَتَّى الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى، وَقَامَ ذَلِكَ الْأَعْرَابِيُّ، أَوْ قَالَ غَيْرُهُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، تَهَدَّمَ الْبِنَاءُ، وَغَرِقَ الْمَالُ، فَادْعُ اللهَ لَنَا. فَرَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا. فَمَا يُشِيرُ بِيَدِهِ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ السَّحَابِ إِلَّا انْفَرَجَتْ، وَصَارَتِ الْمَدِينَةُ مِثْلَ الْجَوْبَةِ، وَسَالَ الْوَادِي قَنَاةُ شَهْرًا، وَلَمْ يَجِئْ أَحَدٌ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلَّا حَدَّثَ بِالْجَوْدِ
‘আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় কোন এক জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু‘আ করুন। তিনি দু’ হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খন্ড মেঘও দেখিনি। যাঁর হাত আমার প্রাণ, তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু‘আ শেষে) তিনি দু’ হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খন্ড উঠে আসল। অতঃপর তিনি মিম্বার হতে নীচে নামেননি, এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর দাড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমু‘আহ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমু‘আহর দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ি ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন। তখন তিনি দু’ হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ্ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দু‘আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খন্ডের দিকে ইশারা করছিলেন, আর সেখানকার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদিনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে এবং কানাত উপত্যকার পানি একমাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল, তখন (মদিনার) চারপাশের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে, সে এ প্রবল বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৩]
উভয় আমলই রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত। কাজেই উভয়টার উপর আমল করা যাবে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/25671/article-details.html