প্রশ্ন
আখেরী চাহার সোম্বা কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আখেরী চাহার সোম্বা বাক্যটি ফারসি। এর অর্থ হল, সফর মাসের শেষ বুধবার। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে রাসূল (সা.) জ্বরাক্রান্ত ছিলেন। জ্বরের তীব্রতায় ও প্রচুর মাথাব্যথার কারণে রাসূল (সা.) বারবার বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছিলেন। অতঃপর তাঁর মাথায় পানি ঢালা হলে তিনি কিছুটা আরামবোধ করেন এবং মসজিদে যেয়ে জোহরের নামায আদায় করেন। হাদিসের কিতাবে ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত,
أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ لَمَّا ثَقُلَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَاشْتَدَّ بِهِ وَجَعُهُ اسْتَأْذَنَ أَزْوَاجَهُ أَنْ يُمَرَّضَ فِيْ بَيْتِيْ فَأَذِنَّ لَهُ فَخَرَجَ وَهُوَ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ تَخُطُّ رِجْلَاهُ فِي الْأَرْضِ بَيْنَ عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَبَيْنَ رَجُلٍ آخَرَ قَالَ عُبَيْدُ اللهِ فَأَخْبَرْتُ عَبْدَ اللهِ بِالَّذِيْ قَالَتْ عَائِشَةُ فَقَالَ لِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ هَلْ تَدْرِيْ مَنْ الرَّجُلُ الآخَرُ الَّذِيْ لَمْ تُسَمِّ عَائِشَةُ قَالَ قُلْتُ لَا قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ هُوَ عَلِيُّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ وَكَانَتْ عَائِشَةُ زَوْجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تُحَدِّثُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا دَخَلَ بَيْتِيْ وَاشْتَدَّ بِهِ وَجَعُهُ قَالَ هَرِيْقُوْا عَلَيَّ مِنْ سَبْعِ قِرَبٍ لَمْ تُحْلَلْ أَوْكِيَتُهُنَّ لَعَلِّيْ أَعْهَدُ إِلَى النَّاسِ فَأَجْلَسْنَاهُ فِيْ مِخْضَبٍ لِحَفْصَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ طَفِقْنَا نَصُبُّ عَلَيْهِ مِنْ تِلْكَ الْقِرَبِ حَتَّى طَفِقَ يُشِيْرُ إِلَيْنَا بِيَدِهِ أَنْ قَدْ فَعَلْتُنَّ قَالَتْ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى النَّاسِ فَصَلَّى بِهِمْ وَخَطَبَهُمْ
‘আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল (সা.)-এর রোগ প্রবল হল ও ব্যথা বেড়ে গেল, তখন তিনি আমার ঘরে সেবা-শুশ্রূষা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁর স্ত্রীগণের নিকট অনুমতি চাইলেন। তাঁরা অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘর থেকে বের হয়ে ইবনে আববাস (রা.) ও অপর একজন সাহাবীর মাঝে যমীনের উপর পা হিঁচড়ে চলতে লাগলেন। উবাইদুল্লাহ (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.)-কে আয়েশা (রা.)-এর কথিত ব্যক্তি সম্পর্কে জানালাম, তখন আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) আমাকে বললেন, তুমি কি সেই অন্য ব্যক্তিকে জান যার নাম আয়েশা (রা.) উল্লেখ করেননি? আমি বললাম, না। ইবনে আববাস (রা.) বললেন, তিনি হলেন আলী (রা.)। রাসূল (সা.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) বর্ণনা করতেন যে, যখন রাসূল (সা.) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর ব্যথা বেড়ে গেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন সাত মশক যার মুখ এখনও খোলা হয়নি, তা থেকে আমার শরীরে পানি ঢেলে দাও। যেন আমি (সুস্থ হয়ে) লোকদের নাসীহাত দিতে পারি। এরপর আমরা তাঁকে রাসূল (সা.)-এর সহধর্মিণী হাফসাহ (রা.)-এর একটি বড় গামলায় বসালাম। তারপর আমরা উক্ত মশক হতে তাঁর উপর ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ঢালতে লাগলাম যতক্ষণ না তিনি তাঁর হাত দ্বারা আমাদের ইশারা করে জানালেন যে, তোমরা তোমাদের কাজ পুরা করেছ। আয়েশা (রা.) বলেন, তারপর রাসূল (সা.) লোকদের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে জামা‘আতে সালাত আদায় করলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন।[সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৪৪২]
সেদিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। তাই কোনো কোনো মানুষ এইদিনটিকে পালন করে। এটা সম্পূর্ণ বিদআত। খাইরুল কুরুনে এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং ইসলামে এই দিনটি পালন করা নিষিদ্ধ।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
‘যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৯৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭১৮]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/25208/article-details.html