প্রশ্ন
কাফের ব্যক্তির মৃত্যুর পর কী কী বিষয় ঘটে? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত একটি হাদিস রয়েছে। সে হাদিসে ২য় অংশে কাফের বান্দার মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছে। নিম্নে হাদিসটির অর্থ হুবহু উল্লেখ করা হলো।
হযরত বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেন,
কাফের বান্দা যখন পৃথিবী ছেড়ে আখিরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, তখন আকাশ থেকে একদল কালো চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতা তার কাছে অবতীর্ণ হন, যাদের সঙ্গে শক্ত চট থাকে। তাঁরা ঐ ব্যক্তির খুব কাছেই অবস্থান করেন। অতপর মৃত্যুর ফেরেশতা তার কাছে আসেন এবং তার মাথার কাছে বসেন। এরপর বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা, আল্লাহ তাআলার রোষের দিকে বের হয়ে এসো। রাসূল (সা.) বলেন, এ সময় রূহ ভয়ে তার দেহের এদিক সেদিক পালাতে থাকে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে টেনে বের করে আনে, যেমন লোহার গরম শিক ভেজা পশম থেকে টেনে বের করা হয়।
তখন মালাকুল মাউত তাকে গ্রহণ করেন। কিন্তু গ্রহণ করার পর এক মুহূর্তের জন্যেও নিজের হাতে রাখে না; বরং অপেক্ষমাণ ফেরেশতাগণ তাড়াতাড়ি তাকে সে চটে জড়িয়ে নেন। তখন তার থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হতে থাকে যা পৃথিবীর সকল গলিত লাশের দুর্গন্ধের চেয়েও আরো বেশি দুর্গন্ধ। তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ উপরে উঠতে থাকেন। তাকে নিয়ে তাঁরা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তখন তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নিকৃষ্ট রূহটি কার? তখন দুনিয়াতে লোকেরা তাকে যে সব উপাধিতে ভূষিত করত সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপটি দিয়ে ভূষিত করে ফেরেশতাগণ বলবেন, এ হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুক।
এভাবে তাকে প্রথম আকাশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। অতপর তার জন্যে আকাশের দরজা খুলে দিতে চাওয়া হয়, কিন্তু তখন আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয় না। এ কথা বলার সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করেন,
لاتفتح لهم أبواب السماء ولايدخلون الجنة حتى يلج الجمل في سم الخياط
অর্থ: ‘তাদের জন্যে আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে।’ [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৪০]
তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তার ঠিকানা “সিজ্জীনে” লিখ, জমিনের সর্বনিম্নস্তরে। ফলে তার রূহকে জমিনের উপর খুব জোরে নিক্ষেপ করা হয়। একথা বলার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি তেলাওয়াত করেন,
ومن يشرك بالله فكأنما خرمن السماء فتخطفه الطير أوتهوي به الريح في مكان سحيق
অর্থ: ‘যে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শরীক করে সে যেন আকাশ থেকে পড়েছে, অতপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে। অথবা ঝঞ্জাবায়ু তাকে বহুদূরে নিক্ষিপ্ত করেছে’। [সূরা আল-হাজ্ব, আয়াত: ৩১]
এরপর তার রূহ তার দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তার কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। অতপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার পরওয়ারদেগার কে? সে বলেন হায়! হায়! আমি তো জানি না। অতপর জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন-ধর্ম কী? সে বলে, হায়! হায়! আমি তো জানি না। এরপর জিজ্ঞেস করেন, এ লোকটি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? সে বলে, হায়! হায়! আমি জানি না।
এ সময় আকাশের দিক থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলে যে, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্যে দোযখের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং দোযখের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তখন তার দিকে দোযখের উত্তাপ ও লু হাওয়া আসতে থাকে। আর তার কবরটি তার জন্যে এত সংকুচিত হয়ে যায় যে, তার এক দিকে পাঁজড়ের হাড্ডি অপর দিকে ঢুকে যায়।
এ সময় তার নিকট একজন অতি কুৎসিত বিভৎস চেহারাবিশিষ্ট নোংরা অতি দুর্গন্ধযুক্ত লোক আসে এবং বলে, তোমার অপছন্দনীয় বিষয়ের সুসংবাদ গ্রহণ কর। এ দিনটি সম্পর্কে দুনিয়াতে তোমার সঙ্গে ওয়াদা করা হতো। তখন সে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তোমার চেহারাটি এমন চেহারা যা খারাপ কিছু বয়ে আনে। তখন সে বলে, আমি তোমার বদ আমল। তখন সে বলে, হে আল্লাহ! কিয়ামত কায়েম কর না।
[মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস: ১৬৩০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৮৫৩৪]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/1099/article-details.html