প্রশ্ন
একজন সদ্য বিধবা নারীর উপর কী কী কাজ করা জরূরি? কুরআন এবং হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
কুরআন এবং সহিহ হাদিসের আলোকে সদ্য বিধবা নারীর ৬ টি আবশ্যকীয় কাজ রয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো।
১। স্বামীর ঘরে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবে। গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে।
২। ইদ্দত পালন শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো অলংকার পরিধান করবে না।
৩। ইদ্দত পালন শেষ হওয়া পর্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সুন্দর কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো রংয়ের কাপড় পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
৪। ইদ্দত পালন শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
৫। ইদ্দত পালন শেষ হওয়া পর্যন্ত চোখের সুরমা কিংবা চেহারার রূপচর্চায় ব্যবহৃত সকল ধরনের প্রসাধনী পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
৬। ইদ্দত পালন শেষ হওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো বিয়ের প্রস্তাব দিবে না। তবে ইঙ্গিত দিতে কোনো অসুবিধা নেই।
সদ্য বিধবা নারীর জন্য জন্য এ ৬টি বিষয় মেনে চললেই হবে। এর বেশি কোনো কিছুই তার উপর বর্তাবে না। বিধবা নারীর উপর এর থেকে বেশি কিছু চাপিয়ে দেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।
পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হচ্ছে,
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِنْ نِسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
অর্থ: ‘তোমাদের যে সব স্ত্রীগণ মাসিক ঋতু আসার বয়স অতিক্রম করেছে তাদের (ইদ্দতের) ব্যাপারে যদি তোমাদের সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে তাদের ‘ইদ্দাতকাল তিন মাস, আর যারা (অল্প বয়স্কা হওয়ার কারণে) এখনও ঋতুবতী হয়নি (এ নিয়ম) তাদের জন্যও। আর গর্ভবতী স্ত্রীদের ‘ইদ্দতকাল তাদের সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন। [সূরা আত-ত্বলাক, ০৪]
হাদিস শরিফে এসেছে,
সহিহ বুখারিতে উম্মে হাবীবা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি যে,
‘আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি সময় হিদাদ বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৩৪]
হিদাদ পালনের অর্থ হলো, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি, অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। [আল জামে’ লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১১৮]
উম্মে সালামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন,
‘যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২২৯৮]
আলমাবসুত, সারাখসী ৬/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০-৫৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৪৫২; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/২৩১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০; ফাতহুল বারী ৯/৪০১, ৩৯৫
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/1328/article-details.html