প্রশ্ন
কুরবানি, ফিতরা, যাকাত এবং হজ্ব প্রত্যেকটির নেসাব বর্ণনার সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের কথা বলা হয়েছে। কোনগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ, তা বুঝিয়ে বললে উপকৃত হতাম।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
যে সম্পদগুলো একজন ব্যক্তির জীবিকা নির্বাহে কাজে আসে না এবং যেগুলো ছাড়াও সংসার ভালভাবে চলে যায় কিংবা যে সম্পদগুলো তার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় না, এমনকি সারা বছরেও কখনো প্রয়োজনে আসে না সেগুলো হচ্ছে ব্যক্তির প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ।
কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে নিম্নে তার বিবরণ উল্লেখ করা হল:-
উদাহরণ ১. জনাব রহিমের ৫ টি বাড়ি রয়েছে। এগুলোর ভাড়া দ্বারা সে জীবিকা নির্বাহ করে। সংসার বড় হবার কারণে পুরো টাকাই পরিবারের পিছনে ব্যয় হয়ে যায়, কোনো অংশ বাকি থাকে না। এ অবস্থায় জনাব রহিমের ৫টি বাড়ির সকল ভাড়া প্রয়োজনীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
পক্ষান্তরে জনাব করিমের মাত্র ২ টি বাড়ি রয়েছে। যার একটির ভাড়া দ্বারা তার সংসার ভালভাবে চলে যায়। এ অবস্থায় অন্য বাড়িটি জনাব রহিমের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।
উদাহরণ ২. জনাব জসিমের ৩০ বিঘা জায়গা রয়েছে। এতে চাষ করে যে ফসল হয় তা তার সংসার খরচে ব্যয় হয়ে যায়। এক্ষত্রে পুরো ৫০ বিঘা জমি জনাব জসিমের প্রয়োজনীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
পক্ষান্তরে জনাব সেলিমের মাত্র ৪ বিঘা জায়গা রয়েছে। যার ২ বিঘার ফসলে তার সংসার চলে যায়। এ অবস্থায় অবশিষ্ট ২ বিঘা জমি জনাব সেলিমের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মাসাআলা
১। মহিলারা আলমারিতে যে সকল কাপড় সাজিয়ে রাখে তা যদি মাঝে মধ্যে পরিধান করে অথবা অন্তত বছরে দু একবার পরিধান করে তবে তা প্রয়োজনীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যথায় তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।
২। বড় বড় ডেগ, বড় বড় বিছানা ইত্যাদি যা দৈনন্দিন কাজে লাগে না, বরং দু-এক বছরে কখনও অনুষ্ঠানে প্রয়োজন হয় তাহলে সেগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে কাপ-প্রিচ, চেয়ার-টেবিল ইত্যাদি যদি সারা বছরে কখনো ব্যবহারে না আসে, তবে সেগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।
৩। টেলিভিশন এবং হারাম বিনোদনের অন্যান্য উপকরণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।
সুতরাং কোনো ব্যক্তির কাছে যদি এ অতিরিক্ত সম্পদগুলো থাকে এবং তার মূল্য যদি ৫২.৫ তোলা রূপার সমপরিমাণ হয় তাহলে তার উপর কুরবানি ও ফেতরা ওয়াজিব হবে। আর এ সম্পদগুলো বিক্রি করে যদি হজ্বে যাওয়ার সামর্থ্য হয়ে যায়, তাহলে তার উপর হজ্বও ফরজ হবে। একই সাথে এমন ব্যক্তির জন্য যাকাত ও ফেতরা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/1233/article-details.html