প্রশ্ন
স্বামী স্ত্রীকে প্রহার করতে পারবে কি? পারলে কতটুকু পারবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
স্বামীর শরিয়তসম্মত অধিকার আদায়ে স্ত্রী যদি অবহেলা করে এবং যেসব ক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য জরুরী সেসব ক্ষেত্রে অবাধ্য হয় তাহলে প্রথমে তাকে উপদেশ দিবে। বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবে। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে নারাজি প্রকাশের জন্য শয্যা পৃথক করবে। এতেও কাজ না হলে তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নারাজি প্রকাশের উদ্দেশ্যে হাল্কা প্রহার করার অবকাশ রয়েছে।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ
‘তোমরা যাদের অবাধ্যতার ভয় করো প্রথমে তাদেরকে উপদেশ দাও। এরপর শয্যা পৃথক কর। এরপর তাদেরকে প্রহার কর।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৩৪]
তবে এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
১. সংশোধনের উপরোক্ত দুটি পন্থা ব্যর্থ হলে কেবল তখনই হালকা প্রহারের অবকাশ আছে।
২. অন্তরে মহব্বত পোষণ রেখে চূড়ান্ত নারাজি প্রকাশের জন্য এমনটি করা যাবে যেন সে সংশোধন হয়ে যায়।
৩. রাগান্বিত অবস্থায় প্রহার করবে না। কারণ রাগের সময় প্রহার করলে শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে।
৪. চেহারা ও স্পর্শকাতর অঙ্গসমূহে প্রহার করা যাবে না।
৫. ক্ষতের সৃষ্টি হয়, হাড্ডিতে চোট লাগে, চামড়ায় দাগ পড়ে, রক্তপাত হয়, শরীরে প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এমনভাবে প্রহার করা যাবে না।
এককথায়, মৃদু প্রহার যার দ্বারা শরীরে স্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না। কারণ, উদ্দেশ্য প্রহার নয়; উদ্দেশ্য হল চূড়ান্ত নারাজি প্রকাশের মাধ্যমে সংশোধন করা।
উল্লেখ্য, স্ত্রীর সংশোধনের চূড়ান্ত পর্যায়েও মৃদু প্রহারকে রাসূল (সা.) পছন্দ করেননি। হাদিস শরিফে এসেছে-
রাসূল (সা. বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীকে প্রহার করে তারা ভালো লোক নয়।’ [আবু দাউদ, হাদিস: ২১৪৬]
অতএব উত্তম আখলাক হলো উক্ত মৃদু প্রহার থেকেও বিরত থাকা।
আরও উল্লেখ্য, আমাদের সমাজে যে কিছু লোক অন্যায়ভাবে স্ত্রীদেরকে প্রহার করে কিংবা প্রহারের ক্ষেত্রে শরিয়তের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায় কিংবা স্বামী নিজেই অন্যায় করে স্ত্রীকে প্রহার করে তাদের এ কাজ শরিয়তের দৃষ্টিতে একেবারেই নিষিদ্ধ। এগুলো সুস্পষ্ট জুলুম এবং নির্যাতন। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এই জুলুমের জন্য তাকে পাকড়াও করবেন।
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৬৫০; আততাশরীয়ুল জিনায়ী ১/৩৮৫
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/17370/article-details.html