প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় জনৈক ব্যক্তির আগমন ঘটেছে। সে মানুষের কাছে বলে বেড়ায়, নামাজের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া না করলে নামাজে ত্রুটি হয় এবং গুনাহ হয়। জানতে চাচ্ছি, উক্ত ব্যক্তির বক্তব্য কি সঠিক? উল্লেখ্য, তিনি আবু দাউদ শরিফের ১২৯৬ নং হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আবু দাউদ শরিফের ১২৯৬ নম্বর হাদিসটি আমরা এখানে উল্লেখ করছি। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,
الصَّلَاةُ مَثْنَى مَثْنَى أَنْ تَشَهَّدَ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَأَنْ تَبَاءَسَ وَتَمَسْكَنَ وَتُقْنِعَ بِيَدَيْكَ وَتَقُولَ : اللَّهُمَّ اللَّهُمَّ فَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهِيَ خِدَاجٌ
‘নামাজ দু’ রাকাত দু’ রাকাত করে আদায় করতে হয়। প্রত্যেক দু’ রাকাতে তোমার তাশাহুদ পড়তে হবে। অতঃপর তুমি তোমার বিপদাপদ ও দারিদ্রের কথা দু’ হাত উঠিয়ে দোয়া করবে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি এরূপ করে না তার আচরণ হবে ক্রটিপূর্ণ।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১২৯৬]
উক্ত হাদিসে ফরজ নামাজের কথা বলা হয়নি। তাছাড়া উক্ত হাদিস থেকে সম্মিলিত মুনাজাতের বিষয়টিও প্রমাণিত হয় না। সর্বোচ্চ এতটুকু প্রমাণিত হয় যে, কোনো ব্যক্তি নফল নামাজের পর দোয়া না করলে তার উক্ত কাজটি ত্রুটিপূর্ণ হবে। তবে এই বিধানকেও আবশ্যকরূপে গ্রহণ করা যাবে না। কারণ মুহাদ্দিসিনগণ উক্ত হাদিসকে যয়ীফ বলেছেন। আর যয়ীফ হাদিস দ্বারা কোনো বিধান সাব্যস্থ করা যায় না।
উক্ত হাদিসে একজন রাবী আছেন আব্দুল্লাহ ইবনে নাফে। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন,
لم يصح حديثه
‘তার হাদিস সহিহ নয়।’ [আত তারিখ ৫/১৩]
সুতরাং উক্ত ব্যক্তির বক্তব্য সঠিক নয়। ফরজ নামাজের পর সর্বদা সম্মিলিত মুনাজাতের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে কোনো বিপদাপাদে সম্মিলিত দোয়া করতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ সম্মিলিত দোয়া করাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হাদিস শরিফে এসেছে,
‘হাবীব ইবনে মাসলামা আলফিহরী (রা.), যিনি বড় ‘মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ’ ছিলেন, একবার তাকে একটি বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করা হয়। তিনি যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সমাপ্ত করার পর যখন যুদ্ধের সময় নিকটবর্তী হল তখন সহযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বললেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দোয়া করে যে, একজন দোয়া করে এবং অন্যরা আমীন বলে তো আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দোয়া কবুল করেন।’ [আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী ৪/২৬; মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৭]
তবে দোয়া করাকে জরুরি মনে করা যাবে না। তাহলে তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
শরহুত তীবী ৩/৩৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৮
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/13749/article-details.html