প্রশ্ন
কিছুদিন আগে একটি বিষয় নিয়ে এক ব্যক্তির সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। বিষয় হল, সিদ্দীকে আকবর কে? আবু বকর (রা.), নাকি আলী (রা.)? ঝগড়ার এক পর্যায়ে সে একটি হাদিস বলেছিল। সেখানে আলী (রা.) নিজে বলেছেন, তিনি সিদ্দীকে আকবর। হাদিসটি পুরো আমার মনে নেই। জানতে চাচ্ছি, ঐ ব্যক্তির দাবি কতটুকু সঠিক?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নে বর্ণিত বক্তব্যটি একাধিক হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে সেটি উল্লেখ করা হল।
قَالَ عَلِيٌّ أَنَا عَبْدُ اللَّهِ، وَأَخُو، رَسُولِهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَأَنَا الصِّدِّيقُ الأَكْبَرُ، لاَ يَقُولُهَا بَعْدِي إِلاَّ كَذَّابٌ صَلَّيْتُ قَبْلَ النَّاسِ بِسَبْعِ سِنِينَ
‘আলী বলেছেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল (সা.)-এর ভাই। আমি পরম সত্যবাদী। আমার পরে কেবল মিথ্যাবাদীই এই (খেতাব) দাবি করবে। আমি লোকেদের সাত বছর পূর্বেই নামাজ আদায় করেছি।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২০]
হাদিসের কিতাবে উক্তিটি বর্ণিত হলেও তা মূলত একটি জাল হাদিস। এই উক্তিটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ মন্তব্য করেছেন। নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হল।
ইমাম ইবনুল জাওযী (রহ.) বলেন,
‘হাদিসটি মুনকার।’ [আল মাওজুআত ১/৩৪১]
হাফেজে হাদিস শামসুদ্দীন যাহাবী (রহ.) বলেন,
‘হাদিসটি মুনকার। আমি বিশ্বাস করি না যে, আলী (রা.) কখনো এমন কথা বলবেন।’ [তাহযীবু তাযীবীল কামাল ৭/২৬৮, হাদিস: ৫২৮৪]
হাফেজ ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন,
‘উক্ত হাদিসটি পুরোটাই মুনকার।’ [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৪৩২]
কাজেই উক্ত ব্যক্তির দাবিটি মোটেই সঠিক নয়। বরং রাসূল (সা.)-এর সকল সাহাবী সিদ্দীক ছিলেন। তবে এই গুণটি আবু বকর (রা.)-এর মাঝে অধিক পরিমাণে থাকার কারণে তাকেই সিদ্দীকে আকবর বলা হয়। তাছাড়া রাসূল (সা.) নিজেই আবু বকর (রা.)-কে সিদ্দীক উপাধী দিয়েছিলেন। হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত যে, (একবার) রাসূল (সা.), আবু বকর, উমর, উসমান (রা.) উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করেন। পাহাড়টি নড়ে উঠল। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, হে উহুদ! থামো তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৭৫]
এ কারণে, সমগ্র উম্মতে মুসলিমা আবু বকর (রা.)-কেই সিদ্দীকে আকবর বলে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/11415/article-details.html